খাজা রাশেদ,লালমনিরহাট: সারাদেশে গত কয়েকদিন ধরে বয়ে যাচ্ছে তীব্র শীতের দাপট।দেশের বিভিন্ন জেলার মতো উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের জনপদ ও বর্তমানে শীতে জুবুথুবু।
তীব্র ঠান্ডার কবল থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানতা বশত অগ্নিদগ্ধ হয় পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা কল্পনা আক্তার (১৯)।
বর্তমানে
টাকার অভাবে চিকিৎসা চালিয়ে নিতে না পারায় এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন কল্পনা। নিজের গর্ভের সন্তান আর নিজেকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের নিকট যাহায্য ও সহযোগিতা চেয়েছেন হতদরিদ্র গৃহবধূ কল্পনা।
অগ্নিদগ্ধ
কল্পনা লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কোদালখাতা গ্রামের কৃষি শ্রমিক রুবেল ইসলামের স্ত্রী।
ও একই ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামের আব্দুল করিমের মেয়ে।
গৃহবধু কল্পনার স্বামী দিনমজুর রুবেল ইসলাম বলেন,
প্রায় পাঁচ মাস পুর্বে তার স্ত্রী কল্পনা সন্তান সম্ভ্যবা হয়।
গত কয়েকদিনের চলমান শৈত্য প্রবাহে শীত নিবারণের জন্য গত, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে বাড়ির রান্নার চুলার পাশে আগুন পোহাতে বসে।ঐ সময়ে, অসাবধানতাবশত তার পরনের কাপড়ে আগুন লেগে যায়। এতে,মুহূর্তের মধ্যেই তার শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পুড়ে যায়।
খবর পেয়ে কল্পনার স্বামী রুবেল তাৎক্ষণিকভাবে তাকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।
ওইদিন বিকেলে কল্পনাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান স্বামী রুবেল।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক কল্পনাকে দেখে ওইদিনই ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাবার জন্য বলেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন কল্পনার শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে তার চিকিৎসা না করা গেলে তাকে ও তার গর্ভের সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। এসব জেনে ব্যয়বহুল এমন চিকিৎসা করাতে না পেরে নিরুপায় হয়ে কল্পনাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসেন রুবেল।
হাসপাতাল থেকে ফেরত গৃহবধূ কল্পনা বর্তমানে সদর উপজেলার ফুলগাছ গ্রামে তার বাবার বাড়িতে বিছানায় শুয়ে পোড়া শরীরে ক্ষতের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।
চিকিৎসকদের তথ্যমতে, মানুষের শরীরের যত জায়গা শতাংশ আগুনে পুড়ে যায়। তত, শতাংশই তার জন্য মৃত্যু ঝুঁকি থাকে।
এমন অবস্থায় বিশেষায়িত হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণ-পরিচর্যার মাধ্যমে তার চিকিৎসা হওয়া জরুরী ।
কল্পনার পরিবার থেকে জানা যায়, দিন এনে দিন খাওয়া অবস্থা তাদের। শতকষ্টের মাঝে ও
সামান্য যেটুকু সঞ্চয় ছিল।
সেটুকুও, রংপুর-লালমনিরহাট আসা-যাওয়ার মধ্যেই ফুরিয়ে গেছে।
কল্পনার স্বামী রুবেল অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, কিভাবে বাচাবো স্তী কল্পনা ও তার গর্ভের সন্তান কে।
কি যে করব,কিছুই বুঝতে পারছি না।
আর বিছানায় পোড়া শরীর নিয়ে কাতরাতে থাকা কল্পনা আক্তার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,আমি বাঁচতে চাই।
আমার গর্ভে বেড়ে ওঠা আমার সন্তানকে এই পৃথিবীর আলো দেখাতে চাই।
তাই,তাদের পাশে দাড়াতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য আকুতি জানান গৃহবধূ কল্পনা আক্তার।