স্টাফ রিপোর্টার:: শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে স্কুলশিক্ষক নাঈমুল হাসানের বিরুদ্ধে তার সহকর্মী নারী শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রতিভা সাইন্স প্রিপারেটরী (পিএসপি) হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নাঈমুল হাসান।
বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে এসে তার বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাছাড়া বেশ কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে নাঈমুল হাসানের স্কুলের নিজ কক্ষ থেকে যৌন উত্তেজক ঔষধ ও এক শিক্ষিকাকে নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়াও তার স্কুলের ভিতরে একটি গোপন কক্ষের সন্ধান পাওয়া গেছে সেখানে শোবার বিছানা থেকে শুরু করে সবকিছু রয়েছে। স্থানীয়রা ধারণা করছে সেখানেই অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকতেন শিক্ষক নাঈমুল হাসান। তবে স্কুলটির পাঠদানের অনুমতি না থাকায় এনিয়ে কথা বলতে রাজি হয় নি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করে বলেন তারা স্কুলে থাকাকালীন – শিক্ষক নাঈমুল হাসান তাদের সঙ্গে অশালীন ও অশোভন আচরণ করছেন। তিনি ছাত্রীদের শারীরিক গঠন নিয়ে নানা অশালীন মন্তব্য ও কটূক্তি করেন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তাদের শরীর স্পর্শ করেন, শারীরিক বিষয় নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। সহপাঠী ছাত্রছাত্রীরা একসঙ্গে খেলাধুলা করলে তিনি নোংরা মন্তব্য করেন এবং সহপাঠীদের সামনে তাদের অপমান করেন। শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গেলেও তখন ক্ষমতা খাটিয়ে তাদের অভিযোগ অথবা পরিবারের কাউকে জানাতে দিতেন না শিক্ষক নাঈমুল হাসান। দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সাল ও ২০২১ এবং ২০২৩ সালে ওই স্কুলের শিক্ষক নাঈমুল হাসানের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল। এখন নতুন করে একই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও শিক্ষিকাদের কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আমরা একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন আচরণ কামনা করি না। অনতিবিলম্বে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় তারা।
বিষয়টি নিয়ে ওই স্কুলের সাবেক শিক্ষিকা (মুন্নী আক্তার ছদ্মনাম) বলেন, আমি ওই স্কুলে দুইবছর চাকুরী করেছি। একদিন নাঈমুল স্যার আমাকে ফোন দিয়ে বলে আমি স্কুলে বাচ্চাদের ঠিক ভাবে পড়াচ্ছি না। আমার বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ অনেক। আপনার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আমি নাঈমুল স্যার স্কুলের লাইব্রেরীতে কথা বলার জন্য বলি তবে স্যার বললো এখানে বললে আপনার মানসম্মান থাকবে না আপনি অন্য কোথাও দেখা করেন। পরে সে আমার বাসার সামনে এসে আমাকে নিয়ে একটি রেষ্টুরেন্টে নিয়ে যায় এবং সেখানে আমার স্কুলের বিষয় কথা না বলে সে আমাকে সেক্সুয়ালি কথাবার্তা বলতে শুরু করে। আমি তখন কৌশলে সেখান থেকে বের হয়ে চলে আমি। এরপর আমি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে তিনি আমাকে হুমকি ধামকি দিতে শুরু করে। পরে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।
নাঈমুল হাসানের অপকর্মের বিষয় কথা হয় ওই স্কুলে সাবেক ও বর্তমান কর্মরত বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী শিক্ষিকাদের সাথে তারা বলেন, স্কুলটির পরিবেশ খুব ভালো। পড়াশোনা ও সুন্দর তবে প্রধান শিক্ষক নাঈমুল হাসান স্যারের চরিত্র একেবারে নোংরা। সে সবসময় স্কুল চলাকালীন আমাদের দিকে খারাপ নজড়ে তাকায়। এবং কেউ শাড়ী পরে না আসলে তাকে লাইব্রেরীতে নিয়ে অশালীন কথাবার্তা বলে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে ভাইয়া নাঈমুল স্যার রাতে বেলায় অযথা ফোন দিয়ে স্কুলের বিষয় কথা না বলে তার ব্যক্তিগত কথা বলে। আমাদেরও সংসার আছে হাজবেন আছে তারা কি মনে করে। এটা নিয়ে প্রতিবাদ করলে সে স্কুল থেকে বের করার পাশাপাশি আমাদের কাছথেকে খালি স্ট্যাম্পে সাক্ষর রেখেছে সেখানে কিছু লিখে ফাঁসিয়ে দেওয়া হুমকি দেয়। আমরাও ভয়ে মুখ খুলি না।
অন্যদিকে (গত ১১ মার্চ) অভিযুক্ত শিক্ষক নাঈমুল হাসানকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শরীয়তপুরের আহ্বায়ক ইমরান আল নাজিরসহ অন্যান্যরা গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে স্বৈরাচার সরকারের পক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে শরীয়তপুর শহর থেকে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ জানিয়েছে, নাঈম হাসানকে অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নামে জুলাই আন্দোলনে হামলার অভিযোগে মামলা ছিল। একারণেই অভিযোগের ব্যাপারে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি।
ভেদরগঞ্জ থানার ওসি মো. পারভেজ হাসান সেলিম বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করে নি। যদি অভিযোগ পাই তাহলে তদন্ত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”