আসাদুল ইসলাম সবুজ।। বিদ্যালয় কক্ষে তাস খেলা, শিক্ষক/কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের লোহাখুচি দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন দুদু। তার বিরুদ্ধে এবার বিদ্যালয়ের সরকারি বই কেজি দরে চানাচুর বিক্রেতার কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগে জানা যায়, ২০২৩ সালে লোহাখুচি উচ্চ দ্বি-মুখী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুদু ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম খন্দকার সহ ৬ জন শিক্ষক/কর্মচারী নিয়োগে অতি গোপনে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে লাখ লাখ হাতিয়ে নিয়েছেন। বিদ্যালয়ের কক্ষে জুয়াবাজি গোপন নিয়োগ স্থগিত চেয়ে অভিভাবকরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসক, শিক্ষা অফিস লালমনিরহাট সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

এদিকে চলতি বছরের জুলাই মাসে লোহাখুচি দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধের দিন দুপুরে প্রধান শিক্ষক দুদু তার কক্ষে বসে ছিলেন। ওইদিন বিদ্যালয়ের একটি টিনসেট কক্ষে গাদি গাদি করে রাখা বিভিন্ন সরকারি বিনামূল্যের বই পিয়ন ও সুইপার সহ ৩ জন বাহির করে মাঠে রাখেন যা প্রায় ৩০/৩৫ মন। এসব বই আজ আর বিদ্যালয়ের কক্ষে নেই।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত ২০২২ ও ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের সরকারি বিনামূল্যের বই কেজি দরে বিদ্যালয়ের সামনে চানাচুর বিক্রেতার মমিনুল ইসলামের মাধ্যমে গোপনে বিক্রি করেন। এসব বইয়ের মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের বাংলা, ইরেজি, গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি, ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, ক্যারিয়ার শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কৃষি শিক্ষা সহ বিভিন্ন বিষয়ের বই রয়েছিল।

কিন্তু প্রধান শিক্ষক দুদু জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য হওয়ার সুবাদে রহস্যজনক কারণে আজও নেয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা। বিদ্যালয় কক্ষে তাস খেলা, শিক্ষক/কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের হলেও এবার সরকারি বিনামূল্যের বই বিক্রির বিষয়টি নিয়ে এলাকায় নানান গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে।

এ নিয়োগে অফিস সহায়ক পদে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রার্থী সাজেদা আক্তার। তিনি জানান, অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যর টাকা দিয়ে নিয়োগ কমিটিকে সবাইকে ম্যানেছ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন দুদু।
তবে শিক্ষক/কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা (২৭ জুলাই) দুপুর ১টায় লোহাখুচি দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য হবে মর্মে যারা নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা দিতে পারেনি সেই সব প্রার্থীর বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার জন্য হুমকি ধামকি দিচ্ছেন।

ওই সুত্রটি আরো জানান, নিয়োগ বাণিজ্যিককে বৈধ করতে এলাকার ক্যাডার বাহিনীকে টাকা বিনিময় ম্যানেছ করে পাহাড়া বসিয়েছেন। যা নিয়ে রাতে দফায় দফায় প্রধান শিক্ষক বৈঠক করছেন। যা নিয়ে পরীক্ষার দিন বঞ্চিত প্রার্থীর সাথে প্রধান শিক্ষককের সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে বলে একটি বিশ্বস্ত সুত্র নিশ্চিত করেছেন।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন দুদু'র কাছ বই বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোনো সরকারি বই বিক্রি করিনি। সরকারি বইগুলো বিদ্যালয়ের কোন কক্ষে রাখা হয়েছে। তা দেখতে চাইলে প্রধান শিক্ষক ব্যস্থতা দেখিয়ে কেটে পড়েন।

সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লিপিকা দত্ত বলেন, কোন সরকারি বই প্রধান শিক্ষক বিক্রি করতে পারবে না। তবে ২৭ জুলাই দুপুর ১টায় লোহাখুচি দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়রে বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অনেক দিন ধরে ওই বিদ্যালয়ের নিয়োগে অনিয়মের কথা শুনছি। সেখানে এসবের কোন প্রমান পাওয়া গেলে প্রয়োজনে নিয়োগ স্থগিত করা হবে। ওইদিন সরকারি বই বিক্রি বিষয়টিও খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।