আশরাফুল হক, লালমনিরহাট।। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাটের তিনটি আসনের সব কটিতে নৌকার সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা। তিন আসনেই তাঁরা একই প্রতীক ঈগল নিয়েছেন। দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা নৌকা আর ঈগলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন নৌকার মাঝি হয়েছেন। তাঁর বিপক্ষে ভোটের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির সদস্য আতাউর রহমান প্রধান। বিভক্তিতে আক্রান্ত দলের একটি বড় অংশ নৌকার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছে।
এখানে নৌকার প্রার্থীর পিএস গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল আক্রমণাত্মক বক্তব্য এবং হামলার কারণে বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছেন। কয়েকবার আদালতের তলব পেয়েছেন। এ কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত, নৌকার বিপক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়েছে। সেদিক থেকে নতুন মুখ হয়েও ভোটের মাঠ জমিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান প্রধান।
লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী ও কালীগঞ্জ) আসনে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ তৃতীয়বারের মতো নৌকা পেয়েছেন। তবে তাঁকে চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছেন নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল হক। নুরুজ্জামান টানা ১০ বছর মন্ত্রিপরিষদে থেকেও নিজ দলকে সুসংগঠিত করতে পারেননি। তাঁর আসনের দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগ কয়েক ভাগে বিভক্ত। রয়েছে পৃথক উপজেলা কমিটি ও দলীয় কার্যালয়। অন্যদিকে মন্ত্রীর আপন ছোট ভাই কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ প্রকাশ্যে নৌকার বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুলের হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। একই প্রচারে আছেন আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টি এই আসনে নতুন মুখ দেলোয়ার হোসেনকে লাঙ্গল দেওয়ায় সংক্ষুব্ধ দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তাঁদের অধিকাংশ এবার প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুলের প্রচার করছেন। সব মিলিয়ে তাঁর ঈগলের ঝাপটায় গতি হারাতে পারে নুরুজ্জামানের নৌকা।
লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনে নৌকায় চড়ে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান। তাঁর বিপক্ষে রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন বক্কর। সদর আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য দ্বন্দ্বের কারণে বিগত পৌরসভা ও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা পরাজিত হয় নিজ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এমনটি ঘটতে পারে। মতিয়ার নির্বাচিত হলে একক আধিপত্য বাড়ার আশঙ্কায় নেতা-কর্মীরা পৌর নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারেন।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাবেদ হোসেন এর সদরে নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। বিএনপির সমর্থক এবং মতিয়ার বিরোধী ভোটই তাঁর লক্ষ্য। সেদিক থেকে ভোটের মাঠে অনেকটা এগিয়ে তরুণ এ জনপ্রতিনিধি।