খাজা রাশেদ,লালমনিরহাট।দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী কৃষি নির্ভর জেলা লালমনিরহাট। চলতি শীত মৌসুমে ফুলকপি নিয়ে বড় বিপাকে পড়েছেন এখানকার কৃষকরা। বাজারে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪/৫ টাকায়। আর এতে করে লোকসানের আশংকায় ফুলকপি চাষিরা চরম হতাশায় মধ্যে রয়েছেন।
জেলার হাট/বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে বেশিরভাগ সবজির।আর এতে ক্রেতাদের মাঝে অনেকটাই স্বস্তি বিরাজ করছে।
অপরদিকে,লালমনিরহাটে ফুলকপি চাষ করে হতাশায় ভুগছেন কৃষকেরা।চলতি মৌসুমের শুরুতে প্রতিটি ফুলকপি ৫০/৬০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ৪/৫ টাকায়। কৃষকদের দাবি তাঁদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের কার্যকরী ভুমিকা নেওয়া প্রয়োজন। না হলে সবজী চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে এখানকার চাষিরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে সবজীর দাম ভালো থাকাতে অতিরিক্ত উৎপাদনের ফলে বাজারে ফুলকপিসহ নানান ধরনের সবজী সরবরাহ বেড়েছে।যে কারণে, চাষিরা তাদের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।বেশিরভাগ চাষিই বাধ্য হয়ে লোকসানের মাঝেই তাদের উৎপাদিত ফুলকপি বিক্রি করছেন। অনেকেই আবার
ক্ষেত থেকে ফুলকপি না তুলেই নষ্ট করছেন।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী,এ বছর জেলার ৫টি উপজেলায় ১১শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে। এই জমি থেকে প্রায় ১২ হাজার ২০০ টন ফুলকপি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। রোগবালাই কম সাথে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হলেও অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে দাম কমে গেছে।এছাড়াও জেলার ৫টি উপজেলার পাইকারি বাজারগুলোতে প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু করে সকাল ৮টা পর্যন্ত বসে স্থানীয়, অস্থায়ী পাইকারি সবজির বাজার।
সরেজমিনে জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে লালমনিরহাট সদর ও আদিতমারী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ফুলকপি চাষ হয়। এসব এলাকা থেকে বিভিন্ন এলাকায় ফুলকপি সরবরাহ হয়ে থাকে। বাজারে টাটকা ফুলকপি পাওয়া গেলেও নেই ক্রেতা। চাষিরা পাইকারি আরত গুলোতে ক্রেতাদের সামনে সাজিয়ে রাখলেও দাম নিয়ে তাদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ।
কয়েকজন ফুলকপি চাষির সাথে কথা বলে জানা গেছে,চড়া দামে সার,কীটনাশক,সেচ ও শ্রমিক দিয়ে উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে ফুলকপি বিক্রি করছেন। অনেক চাষিই উৎপাদিত ফুলকপি জমি থেকে না তুলে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে তা নষ্ট করছেন।
জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানান, আমরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ফুলকপি সহ নানা ধরনের সবজি সরবরাহ করি। এবছর জেলায় ফুলকপি সরবরাহ এত বেশি যে, তাঁরা সব ফুলকপি কিনতে পারছেন না।
জেলা সদরের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার, গোসালা বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, আমাদের পাইকারি সবজির আড়ৎগুলোত থেকে জেলার খুচরা ব্যবসয়ীদের কাছে ফুলকপি সরবরাহ করে থাকি।কিন্তু, বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ থাকায় দাম কম।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শায়খুল আরেফিন বলেন,মৌসুমের শুরুতে ভালো দামে ফুলকপি বিক্রি হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হয়েছিলেন। তবে, একসঙ্গে বেশি ফুলকপিসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করার কারণে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, তারা যেন বিভিন্ন ধরনের ফসল একসাথে চাষ নাকরে আগে পিছে করে চাষ করেন । এতে বাজারে ভারসাম্য আসবে এবং কৃষকেরা ভালো দাম পাবেন।