আশরাফুল হক, লালমনিরহাট।। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মদাতী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে খাবারের হোটেল ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মামলা করে বাড়ি ছাড়া হোটেল ব্যবসায়ী নেছার আলী। হোটেল ব্যবসায়ী নেছার আলী কালীগঞ্জ উপজেলার মদাতী ইউনিয়নের মৌজা শাখাতী গ্রামের মৃত ছকমল আলীর ছেলে। মামলার বিবরন ও স্থানীয়রা জানান, মদাতী ইউনিয়ন পরিষদের গেটের সামনে চামটারহাট বাজারের 'ভাই ভাই হোটেল' নামে খাবার বিক্রির দোকানের আয়ে সংসার চালে হোটেল মালিক নেছার আলীর। হোটেলে ৬ মাস ধরে বাকীতে খাবার খেয়ে ৬০ হাজার টাকা বকেয়া রেখেছেন ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের।
গত ২৮ অক্টোবর দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরের কাছে পাওনা টাকা দাবি করেন হোটেল মালিক নেছার আলী। এ সময় নেছার আলী ও চেয়ারম্যানের মাঝে বাকবিতন্ডা বাঁধে। একপর্যয়ে উভয়ের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটলে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন হোটেল মালিক নেছার আলীকে একটি ঘরে আটকিয়ে রেখে হোটেল ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্থদের।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ গিয়ে আটক নেছার আলীকে উদ্ধার করে এবং চেয়ারম্যানের উপর হামলার ঘটনায় চেয়ারম্যানের দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। সেখানে কয়েকদিন হাজতবাস করে মহামান্য হাইকোর্টের জামিনে মুক্তি পান হোটেল মালিক নেছার আলী।
হোটেলের ক্ষতিপুরনের দাবিতে থানায় অভিযোগ দিলেও প্রভাবশালী চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হওয়ায় তা গ্রহন করা হয়নি। উল্টো একটি চক্র স্থানীয় ভাবে বিষয়টি আপোষ মিমাংসা করে ক্ষতিপুরন দেয়ার নামে কালক্ষেপনে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহের অপচেষ্টা চালায়। পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে দোকানের অপুরনীয় ক্ষতির পাশাপাশি মামলার ঘানি টানতে গিয়ে পথে বসে যায় হোটেল ব্যবসায়ী পরিবারটি। অপর দিকে আগুনে পুড়ে যাওয়া হোটেলের ফ্রিজসহ কোকারিজ জিনিসপত্র ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে রেখেছেন চেয়ারম্যানের লোকজন। চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরের আত্নীয় স্বজনরা সরকারের উচ্চ দফতরে থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস করে না বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগিদের। অবশেষে হোটেলের ক্ষতিপুরনসহ বিচার দাবি করে গত ১৫ ডিসেম্বর হোটেল মালিক নেছার আলীর ছেলে সুজন বাদি হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরকে প্রধান করে ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের করে চেয়ারম্যানের ভয়ে বাড়ি ছাড়া হোটেল ব্যবসায়ী পরিবারটি। মামলাটি তুলে নিতে বিভিন্ন ভাবে হুমকী দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন বাদি সুজন মিয়া। ভাই ভাই হোটেলের পাশের পান বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, পরিষদের ভিতরে কি হয়েছে তা জানি না। তবে হঠাৎ চেয়ারম্যানের লোকজন এসে হোটেল ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করেন। মুহুর্তেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ বাজারের সব থেকে বড় খাবার হোটেল ছিল এটি। তা আজ আগুনের ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়েছে। সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানান তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, চেয়ারম্যানের আত্নীয় স্বজনরা সরকারের উচ্চ পর্যয়ে কর্মরত থাকায় নিজের করা আইনে পরিষদ চালান ও বিচার করেন। প্রতিবাদ করলে নেছারের মত হামলা ও মিথ্যা মামলার ঘানি টানতে হয়। তাই কেউ চেয়ারম্যানের অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন না। তারাও ঘটনাটির সুষ্ঠ তদন্ত দাবি করেন।
হোটেল মালিক নেছার আলী মোবাইলে বলেন, মিথ্যা মামলায় হাজতবাস করে জামিনে মুক্তি পেলেও বাড়িতে থাকতে পারছি না। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে না নিলে প্রানে মেরে ফেলার হুমকী দেয়া হচ্ছে। চেয়ারম্যানের ভয়ে আত্নগোপনে রয়েছি। চেয়ারম্যানের হাত খুব লম্বা বলেও দাবি করেন তিনি।
মদাতী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছি বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারব না।
কালীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আরজু সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে মামলার কপি হাতে এসে পৌছেনি। আদালতের নির্দেশনা পেলে সেটাও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।