ঢাকাসোমবার , ১৫ জানুয়ারি ২০২৪
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

লালমনিরহাটে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বিষবৃক্ষ তামাক চাষ

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
জানুয়ারি ১৫, ২০২৪ ৭:৩০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট: কৃষি প্রধান জেলা লালমনিরহাট। এক সময়ে কৃষকদের ধান, গম, সরিষা, ভুট্টা, কাউন, জব, আলুসহ বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি চাষাবাদের জন্য সুনাম ছিল এ জেলার মানুষের। কিন্তু এখন শুধু মাঠের পর মাঠ, যে দিকে তাকাই, সে দিকে চোখে পড়ে বিষবৃক্ষ তামাকের ক্ষেত। যত দিন যাচ্ছে, ততো বাড়ছে বিষবৃক্ষ তামাকের চাষবাদ।

কৃষকরা অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করলেও সেসব ফসল বাজারজাত করনে নানা সমস্যা পোহাতে হয়, ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বিভিন্ন ফসল চাষাবাদের আগ্রহ হারাচ্ছে সাধারণ কৃষকরা। কৃষি বিভাগের সঠিক তদারকি না থাকায় এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তামাক কোম্পানি গুলো এ অঞ্চলের সাধারণ কৃষকদের বিভিন্ন লোভনীয় আশ্বাস দিয়ে বিষবৃক্ষ তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়তে বাধ্য করছেন। আবার কৃষকরাও অধিক মুনাফার আশায় তামাক চাষাবাদে দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র মতে, লালমনিরহাট জেলায় গত অর্থ বছরে প্রায় ৯ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বিষবৃক্ষ তামাক চাষবাদ হয়েছে। এবারে ধারণা করা হচ্ছে গত অর্থ বছরের চেয়ে এবছর আরও বেশি তামাক চাষাবাদের সম্ভবনা রয়েছে এ জেলায়। তবে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালিয়েন্সের (আত্মা) দাবি, কৃষি বিভাগ তামাক চাষাবাদে যে পরিমাণ জমি রেকর্ড দেখান বাস্তবে এর দ্বিগুণ জমিতে তামাক চাষাবাদ হয়ে থাকে। কৃষি বিভাগের তেমন কোনো সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকায় এ জেলার কৃষকরা তামাক চাষাবাদ থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন না, ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বিষবৃক্ষ তামাকের চাষাবাদ।

বরং প্রতিবছর বিভিন্ন কোম্পানির লোভনীয় আশ্বাসের কারণে নতুন নতুন তামাক চাষি যুক্ত হচ্ছেন। এছাড়াও জাপান, আকিজ, নাসির, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো সহ বেশ কিছু তামাক কোম্পানি এ জেলার পাঁচটি উপজেলায় নিজস্ব ক্রয় কেন্দ্র করেছেন। যেখানে তৈরি করেছেন বড়বড় গুদামঘর। যার ফলস্বরূপ প্রতিনিয়তই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে তামাক চাষাবাদ।

সদর উপজেলার তামাক চাষের বিষয়ে কৃষক আজগর আলী বলেন, বর্তমানে জমিতে যে ফসল উৎপাদন করা হয় তার সঠিক দাম পাওয়া যায় না। কেননা সার, কীটনাশক, ডিজেলসহ মজুরির খরচ ওঠে না। কিন্তু তামাক চাষাবাদ করলে তার নির্দিষ্ট দাম পাওয়া যায় এবং অধিক লাভবান হওয়া যায়।

সদর উপজেলার গোকুন্ডা এলাকার তামাক চাষি নুরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ৫৪শতক জমিতে তামাক লাগা শেষ করলাম। সার, পানি, কিটনাশক দিতে যে টাকা প্রয়োজন তা তামাক কোম্পানি থেকে নিতে পারবো। আগাম টাকা চাইলে আমরা পাই, তাহলে কেন তামাক চাষ করবো না। কৃষি অফিসে ঘুরতে ঘুরতে স্যান্ডেল ক্ষয় হয় অথচ সুবিধা পাইনা। এভাবেই কথা গুলো বলেন তিনি।

আদিতমারী উপজেলার তামাক চাষি লোকমান আলী বলেন, তামাক চাষবাদ করলে আমাদের ফসল নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। তামাক কোম্পানির লোকজন নিয়মিত মাঠে এসে ফলন ভালো হওয়ার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেন। ফলনে কোনো রোগবালাই দেখা দিলে সার ও কীটনাশক দিয়ে সহযোগিতা করেন। আবার সঠিক সময়ে তামাক নিজেরাই ক্রয় করে নেন, এটাই আমাদের সুবিধা।

একই এলাকার কৃষক সামিউল বলেন, আগে জমিতে ধান, আলু, গম চাষবাদ করতাম। কিন্তু বাজার জাতের অভাবে দাম ভালো পেতাম না। তামাক চাষবাদ করলে ফসল মাঠে থাকতেই তামাক কোম্পানির লোকজন তা কিনে নেয়ার নিশ্চয়তা দেন। এমন কি আমরা অগ্রিম টাকা চাইলেও তারা দিয়ে দেয় তাই অন্যান্য ফসল চাষবাদ না করে এখন তামাক চাষবাদ করি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তামাক কোম্পানির একজন প্রতিনিধি বলেন, কোম্পানির কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা তামাক চাষিদের সব সময় খোঁজ-খবর রাখি। মাঠের সমস্যা থেকে শুধু করে বাড়ির কোনো অর্থনৈতিক সমস্যা আছে কি না তাও খবর রাখি। অর্থ প্রয়োজন হলেও ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। এছাড়া তামাক বিক্রির নিশ্চয়তা ও নানা রকম পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের তামাক চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করি।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ নানান উদ্যোগ নেয়। তামাকের আবাদের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে সচেতন করার পাশাপাশি বিকল্প ফসল চাষে কৃষকদের নানান প্রণোদনা দেওয়া হয়। এ কারণে অধিক লাভের আশায় তামাকের বিকল্প ফসল চাষে কৃষকরা আগ্রহ কম দেখান।
তামাকের গ্রাসে যেমন জনস্বাস্থ্য হুমকিতে রয়েছে, তেমনি কৃষি ও পরিবেশ রয়েছে নানান ঝুঁকিতে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণের দুর্বল নীতি বা অবস্থান দেশের কৃষি জমি ধ্বংস, খাদ্য সংকট, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সমস্যার মতো বিষয়গুলোকে প্রকট করে তুলছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। এমন বাস্তবতায় সীমিত ভূখণ্ডের জনবহুল এ দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তামাকের মতো ক্ষতিকর দ্রব্যের উৎপাদন কমানো বা নিয়ন্ত্রণে আনতে নীতিনির্ধারকদের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, বিষবৃক্ষ তামাক শুধু ক্ষতিকরই নয়, মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিও বটে। এজন্য আমরা কৃষকদের তামাক চাষাবাদের জন্য নিরুৎসাহিত করছি। তামাকের পরিবর্তে এ জেলার ব্রান্ডিং ফসল ভুট্টা চাষাবাদের জন্য পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি কৃষকদেরকে কৃষি পুনর্বাসনের আওতায় নানা প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন