রাশেদুল ইসলাম রাশেদ:: তিস্তার ভাঙনে নদীগর্ভে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে নদীপারের মানুষগুলো। তবুও যেন বাপদাদার ভিটে ছেড়ে যেতে মন যেন চায় না এ অঞ্চলের লোকদের। ভাঙনের পর আবার আশায় বুক বাঁধে ওরা। চর জাগলে আবার ফিরে ওই দুর্গম চরাঞ্চলে। বাঁধে আবার ঘর। ভাঙা আর গড়ার মধ্য দিয়ে এভাবেই চলে ওদের জীবন।
গেল বছর কয়েক ধরে তিস্তা নদীর ভাঙনের মাত্রা কম থাকলেও ভারী বর্ষণে এবছর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বেলকা, হরিপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে ওই নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫শ পরিবারের মানুষ। পরিবার-পরিজনসহ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই।
এদিকে, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতে দেখা দিয়েছে তীব্র স্রোত ও ঘুর্ণি। আর তীব্র স্রোত ও ঘুর্ণিতে ভেঙে তছনছ হচ্ছে হরিপুরের পাড়াসাদুয়া, কাপাসিয়া ইউনিয়নের লালচামার ও ভাটি কাপাসিয়ার চরাঞ্চলের মানুষের বসতভিটা ও পাটখেত। আর এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কয়েকদিনের ভাঙনে ভাটি কাপাসিয়ার আশ্রয়ন প্রকল্পের কয়েকটি ঘরসহ প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
ওইদিন সকাল থেকে ভাঙন কিছুক্ষণ বন্ধ থাকলেও বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তা তীব্র আকার ধারণ করে। উপায়ন্তর না দেখে ভাঙন স্থানে উপস্থিত স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের ৫টি ব্রাকের ১২টি পরিবারকে তাৎক্ষণিক খুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
ভাঙন রোধে শীগগির কোনো পদক্ষেপ না নিলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আরো অন্তত দুশো ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দুপুর ১২ টায় গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট কাউনিয়া স্টেশনে তিস্তা নদীর পানি বিপদ সীমার ৪৯ সেন্টি মিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকালকের তুলনায় পানির উচ্চতা হ্রাস পেয়েছে ২১ সেন্টিমিটার।
অন্যদিকে, ফুলছড়ি স্টেশনে যমুনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদ সীমার ২০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ স্টেশনে গতকালের তুলনায় পানির উচ্চতা হ্রাস পেয়েছে ১৩সেন্টিমিটার।
ভাটি কাপাসিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া জানান, ‘কাপাসিয়ায় নদীর পশ্চিম তীরে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আর পূর্ব দিকে ভাটি কাপাসিয়ার আশ্রয়ন প্রকল্পের ভাঙন রোধে ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুর-এ আলম বলেন, ‘ ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ ভাঙন এলাকাগুলো পরিদর্শন করে চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও ভাঙনের বিষয়টি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী
মো. হাফিজুল হক জানান, জেলায় ১৬৫টি চরাঞ্চল রয়েছে। উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নেমে আসা ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুটি চলমান প্রকল্পের বাইরে সুন্দরগঞ্জের কাশিমবাজার, পাড়াসাদুয়া, ভাটি কাপাসিয়া ও লালাচামারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা লালচামার ও কাসিমবাজারে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।