রাশেদুল ইসলাম রাশেদ।। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে অবরুদ্ধ করে জোরপূর্বক বিভিন্ন কাগজে সই নেওয়ার অভিযোগে আট শিক্ষক-কর্মকর্তার নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। মামলার বাদী ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক ‘বাদী-বিবাদীর দুই পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে’ উল্লেখ করে বিচারকের কাছে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। পরে আদালত আট শিক্ষক-কর্মকর্তার জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিন পাওয়া আট শিক্ষক-কর্মকর্তা হলেন- ভিসির দুর্নীতি ও অনিয়ম বিরোধী শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার, রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষক সংগঠন নীল দলের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ, লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ চৌধুরী, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ারুল আজিম, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক এ টি জি এম গোলাম ফিরোজ ও কলা অনুষদের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা ফলপ্রকাশের দাবিতে মধ্যরাতে আন্দোলন শুরু করলে প্রশাসন আন্দোলন দমাতে আইন লঙ্ঘন করে পরীক্ষা কমিটির সদস্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সই ছাড়াই দুই কর্মকর্তার যোগসাজশে ফলপ্রকাশ করেন। এ ফলপ্রকাশের অনিয়ম ঢাকতেই উপাচার্য তরিঘরি করে বুধবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোরশেদ হোসেনকে অব্যাহতি দেন। পরে বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল হককে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব দেয়া হয়।
জানা যায়, অনিয়ম করে ফলপ্রকাশের ঘটনায় একইদিন বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) নাজমুল হককে অবরুদ্ধ করে বৈধভাবে ফলপ্রকাশের দাবি জানান অধিকার সুরক্ষা পরিষদের নেতৃবৃন্দ। এই ঘটনায় শনিবার (১৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১টায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিমের তাজহাট থানায় নাজমুল হক বাদী হয়ে অধিকার সুরক্ষা পরিষদের নেতৃবৃন্দের নামে মামলাটি করেন। পরদিন সকালে রবিবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর আদালতে তিনি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন।
এ ব্যাপারে জানতে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাজমুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।
অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে আইন লঙ্ঘন করে পরীক্ষা কমিটির সদস্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সই ছাড়াই দুই কর্মকর্তার যোগসাজশে তড়িঘড়ি করে ফলপ্রকাশ করে প্রশাসন প্রমাণ করেছে, তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এজন্য ফলপ্রকাশে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরী।’
তিনি আরো বলেন- ‘দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে আন্দোলন ঠেকিয়ে নিজেকে রক্ষায় মামলা করিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তাজহাট থানার ওসি আকতারুজ্জামান বলেন- বাদী মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। আমরা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। দপ্তর সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন তিনি দপ্তরে আসেননা। পরে ভিসির মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।