মোঃ মামুনুর রশিদ (মিঠু)।। লালমনিরহাটের আদিতমারীতে স্ত্রী হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মোঃ ফরজ আলী (৬৫) কে গ্রেফতার করেছে আদিতমারী থানা পুলিশ। সে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দক্ষিণ গোবধা গ্রামের মৃত্যু হোসেন আলীর ছেলে ।
সে পারিবারিক কলহের জেরে তার স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। আসামি তার স্ত্রীকে হত্যার করার ঘটনাটি আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দিয়ে কৌশলে নিজে বেঁচে যেতে চেষ্টা করেছিল। বিধিবাম, সেদিন আদিতমারী থানায় কর্মরত তৎকালীন (২৮/০৭/১৯৯৭)এসআই/ গাউছুল আজম এবং এসআই/ আঃ সাত্তার আত্মহত্যার ঘটনা স্থলের পৌঁছে বুঝতে পারেন এটি আত্মহত্যা নয়, হত্যাকান্ড। তারপর শুরু আইনগত সকল প্রকার দিক বিবেচনা করে চুলচেড়া তদন্ত। প্রমানিত হয় ফরজ আলীর স্ত্রী আত্মহত্যা করেনি, তাকে ফরজ আলী নিজে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে।
বর্নিত আসামির বিরুদ্ধে পেনাল কোড এর ৩০২ ধারার অপরাধে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। আসামি ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকেন। পুলিশের অভিযোগ পত্রের উপর দীর্ঘ শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত আসামি ফজর আলী তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে মর্মে সন্দেহাতীতভাবে সাক্ষ্য- প্রমান পেয়ে আসামিকে তার অনুপস্থিতিতে বিজ্ঞ আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন।
আসামি ফরজ আলী ৩০/৩৫ বছরের টগবগে জওয়ান ছিল সে সময়। ভারত সীমানার কাছে বাড়ি হওয়ায়, তিনি ধরেই নিয়েছিলেন স্ত্রীকে হত্যার পর সীমানা পাড় হয়ে বাকি জীবনটা ভারতের নাগরিক হয়ে ভারতেই থেকে যাবেন। কিন্তু না, একটা সময় ভারত তাঁকে আশ্রয় দেয়নি। তখন সে নিজেকে বাচানোর জন্য চলে যায় কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী থানার ভারত সীমান্ত ঘেষা দূর্গম কোন গ্রামে। সেখানেই সে নিজেকে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে কাটিয়ে দেয় জীবনের ২২/২৩ টি বছর। নতুন করে আবারও বিয়ে, সন্তান, সংসার সবকিছুই শুরু করে দেন। হয়তো ভুলেও গিয়েছিলেন, তার কোন স্ত্রী ছিল যাকে সে নির্মমভাবে হত্যা করে আত্নগোপন করে আছে!!!
আবারও বিধিবাম, আদিতমারী থানার সেই পুলিশ অফিসার শুধু নাম-পদবীর পরিবর্তন,এএসআই/ আতাউল গনি, টগবগে জওয়ান ফরজ আলীকে বৃদ্ধ অবস্থায় আবিষ্কার করে ফেলেন। তিনি আসামী ফরজ আলীর বিষয়টি ওসি কে জানালে আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বিষয়টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘এ’সার্কেল মারুফা জামাল এবং জেলা পুলিশের এসপি, আবিদা সুলতানা কে জানান। তার আদেশ যেখানে থাকুক না কেন, আসামিকে গ্রেফতার দেখতে চাই, যা যা করনীয় আপনি করেন এমন নির্দেশনা পেয়ে ওসি গত ২০ জুন রাত্রী অনুমান ১১.৩০ ঘটিকার সময় তৎক্ষনাৎ এএসআই ও তার টিমকে কুড়িগ্রাম ভূরুঙ্গামারী থানার উদ্দেশ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় পাঠিয়ে দেন। ওসি ভূরুঙ্গামারী তিনি যথেষ্ট আন্তরিকতা নিয়ে আদিতমারী থানা পুলিশ টিমকে সহযোগিতা করেন। একটি সফল অভিযানের মধ্য দিয়ে ২৩ বছর যাবৎ আত্নগোপনে থাকা টগবগে জওয়ান যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বৃদ্ধ ফরজ আলীকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে ইতি টানেন নিশংস হত্যাকান্ডের রহস্যের। সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ, চার্জশিট দাখিল,ন্যায় বিচারের জন্য সাক্ষী হাজির করা এবং রায় বাস্তবায়নের জন্য আসামিকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করনের মধ্যদিয়ে পুলিশী কর্মকান্ডের চুড়ান্ত পরিসমাপ্তি ঘটানো হয়েছে বলে আদিতমারী থানার ওসি জানান।
তিনি আরো বলেছেন পুলিশ আছে, পুলিশ থাকবে মানুষের হৃদয়ে অনন্তকাল —–, শুধু ফরজ আলীরা হয়তোবা পুলিশকে সারাজীবন ঘৃণা করেই যাবে বলে ওসি সাইফুল ইসলাম পুরো ঘটনাটি ২২ জুন মঙ্গলবার তার অফিসিয়াল ফেসবুকে তুলে ধরেছেন। তবে এমন ঘটনায় সাধারণ মানুষ লালমনিরহাট পুলিশ বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।