রাকিব হোসেন----> বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়তেই পারে- এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এই দাম বাড়ার একটা মাত্রা তো থাকতে হবে। কোনো জিনিসের দাম বাড়ানোর আগে বিক্রেতাকে দেখতে হবে, চিন্তা করতে হবে- মানুষের কতটুকু ক্ষমতা বা সাধ্য রয়েছে। সেটি যদি কোনো বিলাসী সামগ্রী হয়, তা না হয় বাদ-ই দিলাম। কিন্তু যদি সেটি হয় নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো সামগ্রী বা উপাদান, তাহলে ব্যাপারটি নিয়ে কথা উঠতেই পারে।
দেশের একটি বিরাট সংখ্যার মানুষ দিন এনে দিন খায়; রয়েছে নিম্ন আয়ের অসংখ্য মানুষ। নিম্ন মধ্যবিত্তদের কথাও এ ক্ষেত্রে বাদ দেওয়া যাবে না। প্রকৃত অর্থে, নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো জিনিসের দাম যখন খুশি তখন ইচ্ছেমতো বাড়ালে তা সবার জন্যই কষ্টকর। এর আগে এ রকম একটি খেলা হয়ে গেল পেঁয়াজ নিয়ে। পেঁয়াজের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি ছিল আশ্চর্যজনক। যেখানে সবাই কমপক্ষে এক থেকে দুই কেজি পেঁয়াজ কিনত, সেখানে এমন আকাশছোঁয়া দামে অনেককেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আধা কেজি বা তারও কম কিংবা অনেককে পেঁয়াজ বাদ দিয়েই বাজার করতে হতো; রান্না করতে হতো। বর্তমানে আবারও শুরু হয়েছে মূল্যবৃদ্ধির খেলা।
ভাবতে সত্যিই লজ্জা হয়, আমাদের দেশের বাজারগুলোতে দ্রব্যমূল্য খুব সহজেই লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটে বেড়ায়। এসব বন্ধে প্রতিবাদ করার যেন কেউ নেই! দেখা গেছে, কেউ শুধু একটিবার যে কোনো জিনিসের দাম বাড়ানোর ইচ্ছেটা করলেই হলো, সে সহজেই তা করে ফেলতে পারে- এমন একটি চাকাকলের মধ্যে পড়ে গেছে গোটা দেশ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- তাহলে কি বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই এখানে? কেউ কি তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে না? কঠিন শাস্তির বিধান কি করা যেতে পারে না তাদের জন্য? তাহলে কি ধরে নেব, এই শক্তিশালী চক্রের হাতে সবার হাত-মুখ বাঁধা? সবাই চোখে কালো কাপড় জড়িয়ে চুপটি করে বসে আছে? সবাই খেয়ে-পরে একটুখানি বাঁচার স্বপ্ন দেখে। সবাই আশা করে, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকুক। কিন্তু তাই কি হয়? আমরা দেখি, বিভিন্ন সিন্ডিকেটের বেড়াজালে প্রায়ই আবদ্ধ থাকে সবাই। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ কেউ গ্রহণ করে না এবং সাধারণত করতেও দেখা যায় না।
করোনার আতঙ্কের মধ্যে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়া মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো। করোনার কারণে আজ অনেকেরই চাকরি নেই, অনেকের ব্যবসা বন্ধ। কেউ বেকার ও নিঃস্ব হয়ে অসহায়ের মতো দিন কাটাচ্ছে। কেউ আবার তার ভালো চাকরিটি হারিয়ে রাস্তায় নেমে গেছে। দিনমজুর হয়ে কাজ করতেও অনেকে বাধ্য হচ্ছে শুধু পেটের তাগিদে; পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটুখানি খেয়ে-পরে বাঁচার আশায়। অবশ্য এ কষ্ট, এ যন্ত্রণা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না। হয়তো যারা অকারণে খেয়াল-খুশিমতো এভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছেন, তারা বুঝতেও চান না সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা। সবার মধ্যেই যেন আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার স্বপ্ন বিরাজ করে সারাক্ষণ। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে এমন অবস্থা তো মেনে নেওয়া যায় না। দ্রব্যমূল্যের মনগড়া বৃদ্ধি অবশ্যই আমাদের ঠেকাতে হবে, কঠিন আইনের মাধ্যমে অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে এ নোংরা খেলা।
মহামারি করোনা এরই মধ্যে আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে, আমাদের অনেককে নিঃস্ব করে দিয়েছে। কমবেশি সবার মধ্যেই পড়েছে এর নেগেটিভ প্রভাব। অনেকে সবকিছু হারিয়ে অর্থকষ্টে দিনযাপন করছে। অন্তত সাধারণ জনগণের কথা ভেবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলোর যেন ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করা হয় এবং তা যেন সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সহনশীল মাত্রায় মূল্য নির্ধারণের জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণকারীদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্ন অজুহাতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মূল চক্রের বিরুদ্ধে আমাদের বিবেককে জাগ্রত করি। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে তাদের পাশে দাঁড়াই। কোনো অজুহাতে কেউ যেন কখনও ইচ্ছেমতো কোনো জিনিসের দাম বাড়াতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি দিই।