মূর্তি আর ভাস্কর্য এক নয় বলে মনে করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। তিনি বলেন, যাঁরা মূর্তি আর ভাস্কর্যকে এক করে দেখেন তাঁরা ভুল করছেন। এটা তাঁদের বোঝার ভুল। যাঁরা আন্দোলন করছেন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে বলেও জানান তিনি।
আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন নবনিযুক্ত ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের রাজধানীর ধোলাইরপাড় এলাকার চৌরাস্তায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। এ ভাস্কর্যকে ‘মূর্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর নির্মাণকাজ বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতাদের জবাবে মাঠে নেমেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ কয়েকটি সংগঠন। এসব বিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, অনেকেই মূর্তি আর ভাস্কর্যের মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে না পেরে আন্দোলন করছেন। এ নিয়ে তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির সুরাহার করবেন বলেও জানান।
যাঁরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছেন তাঁদের জন্য আপনার কী বক্তব্য? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কথাটি পরিষ্কার করেই বলেছি। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমি বসব এবং তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করব। ইতোমধ্যে আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও তাঁর বক্তব্য দিয়েছেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদুল হক খান বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই এমন কিছু লোক থাকে, যাদের কাজই হচ্ছে সমস্যা সৃষ্টি করা। আমাদের দেশেও এমন লোক রয়েছে। সমস্যা যখন সৃষ্টি হয়েছে, আলোচনা করে সমাধানও করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারত ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ভাস্কর্য রয়েছে। এসব ভাস্কর্য আর মূর্তি এক জিনিস নয়।
ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রতি প্রশ্ন রেখে ফরিদুল হক খান বলেন, ভাস্কর্য যদি মূর্তিই হয় তবে টাকার ভেতরেও তো বঙ্গবন্ধুর ছবি আছে। এর আগে যাঁরা ছিলেন তাঁদের ছবি ছিল। সেগুলো কীভাবে থাকল? সেগুলো সবাই পকেটে নিয়ে ঘোরে। সারা বিশ্বে সব জায়গায় যান, মুদ্রার ভেতরে ছবি আছে। তারা এগুলো পকেটে নিয়ে ঘোরে কীভাবে?
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জামালপুরের ইসলামপুরের এমপি ফরিদুল হক খান বলেন, আমি মিসরে গিয়েছি, সেখানে দেখেছি। সৌদি আরবে যান সেখানেও ভাস্কর্য আছে। সেটা যদি হয়, আজকে বাংলাদেশে যাঁরা এটা নিয়ে বিতর্ক করছেন তাঁদের চিন্তা করতে হবে, মূর্তি ও ভাস্কর্য এক নয়।
ভাস্কর্য আর মূর্তি যদি আলাদা বিবেচনা করা হয়, তাহলে এর অর্থ কী এমন হতে পারে যে ভাস্কর্য রক্ষা করা যেতে পারে, আর মূর্তি... এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “না না মোটেই না। … সনাতন ধর্মের যারা আছেন, তারা তাদের ধর্ম পালন করবেন। এটা নিয়ে তো কোনোদিন কিছু হয়নি।”
১৯৯১ সালে হিন্দুত্ববাদীরা যখন ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙল, তখন উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন জানিয়ে ফরিদুল হক বলেন, সে সময় তার এলাকায় সনাতন ধর্মের একটি মূর্তিও তিনি ‘ভাঙতে দেননি’।
“আমরা যে ধর্মেরই হই না কেন, যার যার ধর্ম পালন করব। আমরা সকলেই কমবেশি জানি, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু দুষ্ট লোক থাকে, যারা তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের সব দুষ্ট চক্রকে কঠোর হস্তে দমন করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।”
গত ২৪ নভেম্বর প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর জামালপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. ফরিদুল হককে ২৫ নভেম্বর ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
ফরিদুল হক খান বলেন, ‘আগামী দিনে আপনাদের সকলের সহযোগিতায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে চাই। এক্ষেত্রে আমি আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা পাব বলে বিশ্বাস করি।’
‘স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সকল সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সামাজিক ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জাতির পিতার অসম্পূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই।’
নতুন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নৈতিকতাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ। প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নির্দেশনার আলোকে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হজ ব্যবস্থাপনার যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, সারাদেশে মডেল মসজিদ নির্মাণ, মঠ-মন্দির, প্যাগোডা সংস্কার ও উন্নয়ন, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডাভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।’