রাজিব হোসেন সুজন, পটুয়াখালী: ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ বাংলাদেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটি প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সারাদেশের প্রতিটি জেলায়ই রয়েছে কমিটি। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর সাইফুল ইসলামকে সভাপতি ও তানভীর হাসান আরিফকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট পটুয়াখালী জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এদিকে ছাত্রলীগের কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে প্রায় ৬ বছর পরে চলতি বছরের গত ২০ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে নতুন কমিটির সভাপতি-সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত চাওয়া হয়। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন একাধিক ছাত্রনেতা।
তবে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের (নৌকা প্রতীক প্রাপ্ত) দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করা এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক মাহাবুব আলম রুবান ও শাকিল হোসেন সায়েক ছাত্রলীগের মির্জাগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি হতে চাওয়ায় বিভিন্ন মহলে সমালোচনা ও ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের উপরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অত্যাচার, নির্যাতন ও কলেজের নৈশ প্রহরী এবং কর্মচারীদের উপর হামলার অভিযোগ এনে- তার প্রতিবাদে শাকিল হোসেন সায়েককে কলেজ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং বহিষ্কারের দাবীতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ প্রত্যাশী মাহাবুব আলম রুবান বিলুপ্ত হওয়া সুবিদখালী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং শাকিল হোসেন সায়েক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
মির্জাগঞ্জের ৪নং দেউলী সুবিদখালী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মোঃ আনোয়ার খান বলেন, কিছুদিন পূর্বে ছাত্রলীগের মির্জাগঞ্জ উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পরে নতুন করে সভাপতি-সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত চেয়েছে জেলা ছাত্রলীগ। শুনেছি সেখানে নৌকার বিরোধিতা করা মাহাবুব আলম রুবান ও শাকিল হোসেন সায়েক-ও সভাপতি পদ চেয়ে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এটি শুনে খুবই খারাপ লাগলো। যারা দলের বিরোধিতা করে, তারা আবার পদ চায় কেমনে!।
এরা যে দলের বিরোধিতা করেছে তার প্রমাণ কি? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, এর প্রমাণ আমি নিজেই। কারণ, আমি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন (নৌকা প্রতীক) পেয়ে নির্বাচন করেছি। ইনশাআল্লাহ জয়ী হয়েছি। আমার নির্বাচনে মাহাবুব আলম রুবান ও শাকিল হোসেন সায়েক আমার তথা নৌকার বিরোধিতা করেছেন। শুধু বিরোধিতাই নয়, তারা আমার বিদ্রোহী প্রার্থী আজিজ হাওলাদারের সমর্থন করে তার পক্ষে প্রচারণা করেছে। এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদকের কাছে অভিযোগপত্রও দিয়েছি।
উপজেলার ৫নং কাকড়াবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মির্জাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ চেয়ে যারা জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন তার মধ্যে দুজন আছেন নৌকা তথা আওয়ামী লীগের বিরোধী। এরা হলো মাহাবুব আলম রুবান ও শাকিল হোসেন সায়েক। চলতি বছরের ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দলীয় মনোনয়ন (নৌকা প্রতীক) দেন। সেখানে নৌকার বিরোধিতা করে তারা বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ সেলিমের সমর্থন করে প্রচারণা করেছে। তারা এতটাই শক্তিশালী হয়ে প্রচারণা করেছে যে আমি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন (নৌকা প্রতীক) নিয়েও হারতে বাধ্য হয়েছে। আমি মনে করি তাদের কেউ সভাপতি পদ পাওয়া তো দুরের কথা- তাদের সভাপতি পদে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়াটাও আমাদের তথা আওয়ামী লীগের জন্য দুঃখজনক ব্যাপার।
এবিষয়ে অভিযুক্ত এবং সভাপতি পদ প্রত্যাশী মাহবুব আলম রুবান বলেন, আমার নিজের ইউনিয়নের নির্বাচন থাকায় আনোয়ার খানকে তেমন সময় দিতে পারিনি। তারপরও গিয়েছি। এর প্রমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সাথে একসাথে মঞ্চে উঠেছি আবার তার সাথে একসাথে নেমেছি।
৫নং কাকড়াবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন (নৌকা প্রতীক) পাওয়া জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে প্রচারণা না করে আপনি বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ সেলিমের পক্ষে প্রচারণা করেছেন; এমন অভিযোগের বিষয়ে আপনি কি বলবেন? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, আমার সাথে মোহাম্মদ সেলিমের রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই। তবে, দলীয় প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে প্রচারণা করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি তিনি।
অন্য অভিযুক্ত- সভাপতি পদ প্রত্যাশী শাকিল হোসেন সায়েকের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই অভিযোগগুলো করা হয়েছে। আমি নৌকার পক্ষেই কাজ করেছি। তাহলে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা কেন আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এগুলো তারা মিথ্যা বলছে। কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমি সত্যতা প্রকাশের জন্য একটু আত্নগোপনে ছিলাম। সেইফাঁকে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আমাকে বহিষ্কার করানোর জন্য এই বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা যাচাই-বাছাই করে কমিটি দিবো। যদি দলীয় মনোনয়ন পাওয়া (নৌকা প্রতীক) প্রার্থীর বিরোধিতা করা বা সংগঠন পরিপন্থী কোনো কাজের সাথে জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া যায়- তাকে কোনোভাবেই দলে সুযোগ দেওয়া হবে না।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান আরিফ বলেন, কেউ জীবন বৃত্তান্ত জমা দিলে বা ফেসবুকে লেখালেখি করলেই তাকে পদ দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে সকালের সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ব্যক্তিকেই সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচিত করা হবে।
রাজিব হোসেন/আরইসআর