স্টাফ রিপোর্টার:: উজান থেকে নেমে আসা অব্যাহত পাহাড়ি ঢল আর কয়েকদিনের টানা বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
ফসলি জমি, গবাদিপশুসহ ঘরবাড়ির দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে পানিবন্দি পরিবারগুলো। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ করছেন স্থানীয় প্রশাসন।
শনিবার (১৫ জুলাই) সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মিটার ৩৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ৫২ মিটার ১৫ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে শুক্রবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা এবার সর্বোচ্চ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফ উদ দৌলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, টানা বৃষ্টিপাতে ভারতের গজলডোবায় তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় উজানের ঢলে ডালিয়া পয়েন্টে পানি বেড়েছে। এ পয়েন্টে তিস্তার পানি টানা ৪৮ ঘণ্টা ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়ে উজানের ঢলের পানি প্রতি মিনিটে সাড়ে চার লাখ কিউসেক করে ভাটির দিকে আসছে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় মানুষকে সচেতন করছি। আমাদের লোকজন বাঁধগুলোতে টহল দিচ্ছে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড তা মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে।
এদিকে পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ৫ জেলার নদী তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার কয়েক হাজার পরিবার। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে সদ্য রোপণ করা আমন ধানের খেত। পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে।
গত বছর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো নামমাত্র সংস্কার করলেও বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে অধিকাংশ স্থানে ধসে যাচ্ছে। ফলে নদীতে পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধগুলোর স্থায়িত্ব নিয়ে এলাকাবাসী আতঙ্কে রয়েছে। স্থানীয় বেশ কিছু সড়কে বন্যার পানি ছুঁই ছুঁই করছে। পানির চাপ আরও বাড়লে এসব সড়ক উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকবে। তাতে পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
ডিমলার চর কিসমত এলাকার শামসুল হক বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে বাড়িতে পানি উঠতে শুরু করেছে। এখন ঘরের ভেতরে হাঁটুপানি। পোকামাকড়ের ভয়ে ঘুম আসে না, বিছানায় নির্ঘুম কাটাতে হচ্ছে। এ চরের সব বাড়িতে পানি উঠেছে। সব রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। গবাদিপশু নিয়েও কষ্টে পড়েছি।
একই গ্রামের ফেন্সি বেগম বলেন, চারপাশে শুধু পানি আর পানি। সব ডুবে যাচ্ছে। ঘরে মাচা বানিয়ে সেখানে একবেলা রান্না করে তিন বেলা খেতে হচ্ছে। বাচ্চাদের নিয়ে আতঙ্কে থাকি। কখন যে পানিতে পড়ে ডুবে যায়। বড় সমস্যা হচ্ছে, সব টয়লেট ডুবে গেছে। পুরুষেরা বাইরে গেলেও নারীরা চরম বিপদে পড়েছি। বন্যার সময় এটা নারীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা।
বাইশপুকুর গ্রামের সলেমান আলী বলেন, পানিবন্দী হয়ে বৃদ্ধ, শিশু ও নারীদের নিয়ে চরম বিপদে পড়েছি। গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি দিনের বেলায় রাস্তার উঁচু স্থানে রাখলেও রাতে কষ্ট বাড়ে। নির্ঘুম রাত কাটছে সবার। তাই ত্রাণ নয়, তিস্তা নদীর স্থায়ী সমাধান দরকার।
ডিমলা উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মেজবাহুর রহমান বলেন, বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ২০ মেট্রিক টন চাল ও দুই লাখ টাকা মজুত রয়েছে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যানদের পানিবন্দী মানুষের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। তালিকার পর জানা যাবে, কী পরিমাণ মানুষ পানিবন্দী। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে। প্রয়োজনে আমরা ত্রাণসহায়তা পৌঁছে দেব।