খাজা রাশেদ,লালমনিরহাট:লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় জমিজমা ও শহরের বাসা-বাড়ী ছেলে-মেয়েদের নামে লিখে না দেওয়ায় বাবা-মাকে শারিরীক নির্যাতিত করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলো পাষন্ড ছেলে-মেয়েরা।
আর এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সহিদুর রহমান ছেলে, মেয়ে, পুত্র বধু, জামাতা ও তাদের ভাড়াটিয়া লোক সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বর্তমানে হাসপাতাল থেকে ছারপত্র পাওয়ার পর ছেলেমেয়ে, মেয়ে জামাতা, পুত্রবধূ এবং তাদের পরিবারের লোকজনদের ভয়ে লালমনিরহাট শহরের একটি মহল্লায় ভাড়া বাসায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় নির্যাতিত বাবা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা সহিদুর রহমান (৭০) টিনসেড একটি ঘড়ের মেঝেতে বিছানা করে রোজা রাখা অবস্থায় কম্বলের ওপর বিছানা করে শুয়ে বিশ্রাম করছিলেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, আদিতমারী উপজেলার মদনপুর এলাকার মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে সহিদুর রহমান (৭০) এর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রায় ১মাস পুর্বে হাফিজা খাতুন (৪৭) নামের এক বিধবা মহিলাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে তার ছোট ভাই ওয়াজেদ আলীর বাড়ীতে অবস্থান করেন। কিন্তু বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় তার নামের সম্পত্তি ও সদর উপজেলার পৌর এলাকার বালাটারীতে থাকা বাসা-বাড়ী ছেলে মেয়েদের নামে লিখে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় হুমকি প্রদান করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় (গত ৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে ছেলে, মেয়ে, পুত্রবধু, জামাতা ও তাদের ভাড়াটিয়া লোকরা মিলে সহিদুর রহমান তার ছোট ভাই ওয়াজেদ আলীর বাড়ীতে অবস্থান করার সময় তাকে ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী হাফিজা খাতুনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। ওই সময় সহিদুর রহমান তাদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে তার স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি ডাং মার করে শরীরে ফোলা ছিলা জখম সৃষ্টি করেন। এমনকি সহিদুর রহমানের স্ত্রীর পরনের কাপড় টানা হেঁচড়া করে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি ঘটায়। স্ত্রীকে সহিদুর রহমান বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাকেও এলোপাতাড়ি ডাং মার করে শরীরে ফোলা ছিলা জখম সৃষ্টি করেন। ওই সময় সহিদুর রহমানের প্যান্টের পকেটে থাকা ৫ হাজার টাকা, তার স্ত্রীর স্বর্ণের কানের দুল ও গলার চেইন ছিনিয়ে নেয়। পরে সহিদুর রহমানকে হত্যার হুমকি দিয়ে একশত টাকা মূল্যের ৩টি ফাঁকা স্টাম্পে তার স্বাক্ষর সহ জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ছিনিয়ে নেয়। তাদের নির্যাতনে ভুক্তভোগী ও তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে খুন করে লাশ গুম করে দিবো বলে হুমকি দিয়ে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
পরে ভুক্তভোগী সহিদুর রহমান ও তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আহত অবস্থায় স্বামী ও স্ত্রীকে পুলিশ উদ্ধার করে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। যার রেজি নং-২০১৯/৮ ও ২০১৮/৭। ভর্তির পর ভুক্তভোগী সহিদুর রহমানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে রেফার্ট করেন।
বর্তমানে ভুক্তভোগী বৃদ্ধ ওই নবদম্পতি শহরের একটি টিন শেড বাসাবাড়িতে কোনরকম একটি রুমের মেঝেতে বিছানা করে শুয়ে-বসে খেয়ে না খয়ে দিনাতিপাত করছেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সহিদুর রহমান বাদী হয়ে সদর উপজেলার বালাটারী এলাকার বাসিন্দা বাবু আল রশিদ এর স্ত্রী লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা দৌলতুন নাহার রুমি (৩৯), মাহামুদ হাসান মিম (২৮) ও তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসি জিসা (২৫), আদিমারী উপজেলার বিসিক এলাকার সেকেন্দার আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৫৫) ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এর পুত্র সেকেন্দার আলী (৫৭)। জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিমারী এলাকার মোস্তাফিজার রহমানের স্ত্রী জেলার হাতীবান্ধা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মচারী আজমিরা রহমান সাথী (৩২), আদিতমারী উপজেলার মদনপুর এলাকার বদিয়ার রহমানের মেয়ে আয়না খাতুন (২৭), মৃত মহির উদ্দিনের পুত্র লিয়াকত আলী (৪০), সদর উপজেলার বালাটারী এলাকার মৃত আখলাক হোসেনের ছেলে খোলাহাটি রেলওয়ে ষ্টেশনের কর্মকর্তা বাবু আল রশিদ (৪৫) সহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অশ্রুসিক্ত নয়নে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সহিদুর রহমান বলেন, আমার ছেলে, মেয়ে, পুত্র বধু, জামাতা ও তাদের ভাড়াটিয়া লোক মিলে দীঘদিন ধরে জমিজমা ও শহরের বাসা-বাড়ী তাদের নামে লিখে চান। আমি এতে রাজি না হওয়ায় তারা সকলে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। ওই সময় তারা টাকা, স্বর্ণের দুল ও চেইন কেরে নেয় এছাড়া হত্যার হুমকি দিয়ে ৩টি ফাঁকা স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর নিয়ে জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি। আইনের মাধ্যমে এসব ঘটনার বিচার চাই।
আর, এ ব্যাপারে আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহমুদ-উন-নবী বলেন, ভুক্তভোগী বাবার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।