ঢাকাশনিবার , ১২ ডিসেম্বর ২০২০
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভূমিদস্যুদের দখলে এখন তিস্তানদী!

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
ডিসেম্বর ১২, ২০২০ ৬:৩৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বর্ষাকালে বন্যা আর তিস্তার হিংস্র স্রোতে বিলীন হয় ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। শুস্ক মৌসুমে জেগে ওঠা বালুচর দখলে নিতে চলে গ্রামবাসীর সাথে ভূমিদস্যুদের সংঘর্ষ। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সরকারি খতিয়ানভুক্ত ৪০ একর জমি নিজের নামে রেকর্ড করেন নেন আমিন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি।

এ ঘটনায় উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলাও দায়ের হয় আদালতে। ভারতের সিকিম উপত্যকা থেকে সৃষ্ট তিস্তা নদী ভারতের ভূমি বেয়ে নীলফামারীর খড়িবাড়ি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তিস্তা নদী লালমনিরহাট জেলার দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে ৫টি উপজেলাকে প্রবাহিত করে ব্রহ্মপুত্রে মিশে গেছে। উজানে ভারত সরকার গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করে একতরফা নদী শাসন করছে। ফলে বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশে ধেয়ে বন্যা আর তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে এবং শুস্ক মৌসুমে পানির অভাবে বাংলাদেশ অংশ মরুভূমিতে পরিণত হয়। বর্ষাকালে বন্যার প্রবল স্রোতে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার অসংখ্য ঘরবাড়ি ও মাইলের পর মাইল ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়। এসব জমি শুস্ক মৌসুমে পুনরায় জেগে ওঠে। শুস্ক মৌসুমে জেগে ওঠা এসব জমি দখলে নিতে তৎপর হয়ে ওঠে ভূমিদস্যুরা। চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি মামলা। মামলা নিস্পত্তি না ঘটতেই পুনরায় বন্যায় সবকিছু তিস্তায় বিলীন হয়।

এভাবে প্রতিনিয়ত জমি হারানোর ভয় তাড়া করে চরাঞ্চলের মানুষদের। নদীগর্ভে বিলীন হওয়া জমি রেজিস্ট্রি মূলে মালিকানা বিক্রি হয় না। তবে অনেকেই অভাবে পড়ে জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করেন। তবে তা নামমাত্র দামে। বিধিসম্মত না হলেও চরাঞ্চলের জমি বিক্রির এ নিয়ম মান্ধাতা আমল থেকে চলে আসছে। এক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয়েও প্রতারণার শিকার হন বলেও চরবাসীর অভিযোগ। এ চিত্র জেলার অর্ধশত চরাঞ্চলে। সাম্প্রতিক সময়ে কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শালহাটি নোহালি মৌজার মৃত সিদ্দিক আলীর ছেলে আমিন উদ্দিনের একক নামে ২১ নং খতিয়ানের ৩৯.৭০ একর জমি বি.আর.এসে রেকর্ডভুক্ত হয়, যা তাদের স্ট্যাম্পমূলে কেনা জমি বলে দাবি। অপরদিকে স্ট্যাম্পমূলে বিক্রেতাগণ বর্তমানে সেই জমি রেকর্ডভুক্ত হওয়ায় তা মানতে নারাজ। তাদের দাবি, তিস্তার চরাঞ্চলের এসব জমি সরকারি খাস খতিয়ানে রেকর্ড করার কথা। কিন্তু তৎকালীন সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের অবৈধ সুযোগ দিয়ে সরকারি খতিয়ানভুক্ত জমি নিজের নামে রেকর্ড করেন নেন আমিন উদ্দিন। সেই রেকর্ড সংশোধন ও তৎকালীন সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করে ভূমি সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে মিজানুর রহমান। সাম্প্রতি এই প্রায় ৪০ একর জমি দখল নিয়ে আমিন উদ্দিন গংদের সাথে গ্রামবাসীর কয়েক দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাধে। এ নিয়ে উভয় পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা দায়ের করেছে। ওই গ্রামের আব্দুস সালাম ও মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিবছর বর্ষাকালে নদী ভাঙনে সবকিছু বিলীন হয় এবং শুস্কমৌসুমে তা জেগে ওঠে। সরকারি খতিয়ানভুক্ত জেগে ওঠা এসব চরে স্থানীয় ভূমিহীনরাই চাষাবাদ করে সংসার চালায়। কিন্তু টাকার বিনিময়ে এসব খাস জমি নিজ নামে রেকর্ড করে দখল করেন আমিন উদ্দিন গংরা। প্রতিবাদ করায় জমির দখলদার ভূমিহীন পরিবারগুলোকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন আমিন উদ্দিন গংরা। খাস জমি উদ্ধার করে ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ করতে সরকারের ঊর্দ্ধতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা। তবে এসব অভিযোগ নিয়ে রেকর্ডমূলে জমির মালিক আমিন উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তার রেকর্ডকৃত জমির স্ট্যাম্পমূলে ক্রয়ের কাগজপত্র দেখিয়ে বলেন, চরাঞ্চলের জমি আগে খাস খতিয়ানভুক্ত থাকায় রেজিস্ট্রিমূলে বিক্রি করা সম্ভব ছিল না। এ কারণে স্ট্যাম্পমূলে চরাঞ্চলের জমি ক্রয় করেছি। ১৯৮০-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এসব বালুচর কম দামে ক্রয় করেছি। এখন জমি জেগে ওঠায় দাতার উত্তরাধিকাররা অস্বীকারের চেষ্টা করছে। আমার বৈধ কাগজপত্র দেখে সেটেলমেন্টের সার্ভেয়াররা রেকর্ড করেছেন। সরকার দেখে-বুঝে আমার নামে রেকর্ড করেছেন।

এ বিষয়ে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ রাশেদুল হক প্রধান বলেন, খাস খতিয়ানভুক্ত জমি সরকারি সম্পত্তি। এগুলো ক্রয়-বিক্রয়ের কোন নিয়ম নেই। যদি কেউ স্ট্যাম্পমূলে ক্রয় করে নিজ নামে রেকর্ডভুক্ত করে থাকেন, সেটাও বিধিসম্মত নয়। রেকর্ড কর্তন করতে সরকার মামলা করতে পারে। এমন কিছু হয়ে থাকলে তা খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন