কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্ট ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে একটি মসজিদ। মসজিদটি বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডের অভ্যন্তরে অবস্থিত। পরিচিত ঝাকুয়াটারী জামে মসজিদ নামে। মসজিদটির একদিকে বাংলাদেশের বাঁশজানি আর অপরদিকে ভারতের ঝাকুয়াটারী গ্রাম। কোন রকম বাধা বিপত্তি ছাড়াই দুই দেশের পাশাপাশি এ দুই গ্রামের মুসলিম অধিবাসীরা যুগ যুগ ধরে প্রতি দিন পাঁচ ওয়াক্ত এবং জুম্মার নামাজ এক সাথে আদায় করছেন। ফলে দু' দেশের মানুষের সম্প্রীতির অটুট বন্ধন হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি।
জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলেও ভাগ হয়নি সীমান্ত ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা এ মসজিদটি। দুই দেশের পাশাপাশি দুই গ্রামের মানুষকে একই সমাজে আবদ্ধ রেখে চলেছে সেটি। আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ৯৭৮ এর সাব-পিলার ৯ এর পাশে অবস্থিত মসজিদটির উত্তরদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কুচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার ঝাকুয়াটারী গ্রাম। আর দক্ষিণ দিকে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি গ্রাম। দেশ বিভাগের বহু আগে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। দেশ ভাগের পর সীমান্তের শূন্য রেখা ঘেঁষে বাংলাদেশর অভ্যন্তরে পড়ে যায়, মসজিদটি কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে।
মসজিদের ইমাম এবং বাঁশজানি গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক (৪৩) জানান, আজানের ধ্বনি শোনার সাথে সাথে দুই দেশের দুই গ্রামে মুসল্লিরা আসেন মসজিদে। একসাথে নামাজ আদায় করেন। তখন তারা ভুলে যান তারা ভিন্ন দুই দেশের নাগরিক। মসজিদ থেকে বের হয়ে কোলাকুলি করেন। নিজেদের মধ্য কুশল বিনিময় করেন। মিলাদ হয় এবং বিতরণ করা হয় তাবারুক। সেই তাবারুক একসাথে বসে খান তারা। শুধু তাই নয়, অসুখে-বিসুখে, বিপদে-আপদে পরস্পরের কাছে ছুটে আসেন তারা।
বাঁশজানি গ্রামের স্থানীয় ব্যাক্তিরা জানান, মসজিদটির অবকাঠামো ভাঙ্গা হলেও এটি আমাদের গর্বের। দুই দেশের অনেক মানুষ মসজিদটি দেখতে আসেন। নামাজ পড়েন, এতে আমাদের খুব ভালো লাগে।
ভারতের ঝাকুয়াটারী গ্রামের অধিবাসীরা জানান, সীমান্তের এই মসজিদটির অনেক পুরোনো হলেও অবকাঠামোর কোন উন্নতি করা সম্ভব হয়নি। দুই গ্রামের মানুষ যৌথভাবে আর্থিক সহায়তা দিয়ে অস্থায়ীভাবে সংস্কার কাজ করে থাকেন। গ্রামের মাঝ বরাবর একটি কাঁচা সড়ক আছে। সড়কের অর্ধেক অংশ বাংলাদেশের আর অর্ধেক অংশ ভারতের। উভয় দেশের নাগরিক সড়কটি ব্যবহার করেন।
স্থানীয়রা আরও জানান, ভারতের ঝাকুয়াটারী গ্রামে ৪৫ টি পরিবারের আড়াইশ'র মতো মানুষ বসবাস করেন। এই গ্রামে তাদের বসতভিটা-জমিজমা থাকায় তারা কাঁটাতারের বেড়ার ভেতরে চলে যাননি। এই গ্রামে থেকে গেছেন। এই দুই দেশের দুই গ্রামের অধিবাসীদের মধ্যে কখনও ঝগড়া-বিবাদ হয়নি বলে জানান তারা। মসজিদ কমিটির সম্পাদক ও বাঁশজানি গ্রামের বাসিন্দা কফিলুর রহমান জানান, সীমান্ত আইন অনুযায়ী জিরো লাইনের দু'পাশে ১৫০ গজ করে নো-ম্যানস ল্যান্ড রয়েছে। ফলে মসজিদটির অবকাঠামোর উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
পাথরডুবি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির মিঠু জানান, ওই সীমান্তে দু'পাশের গ্রামের অধিবাসীরা পরস্পরের আত্মীয়। তারা শান্তিপূর্ণভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করেন। দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্যরা কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াননি।