নিজস্ব প্রতিবেদক, লালমনিরহাট।।দু’দেশের মানুষের অবাধ যাতায়াত কাঁটাতারের বেড়াবিহীন ৫৪ কিলোমিটার সীমান্ত করোনা ঝুঁকিতে লালমনিরহাট। লালমনিরহাট জেলার ২৮৪ কিলোমিটার ভারত সীমান্ত পথের ৫৪ কিলোমিটার অংশে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে দু’দেশের মানুষের অবাধ যাতায়াত। অরক্ষিত সীমান্তের কারণে করোনা ঝুঁকিতে আছে লালমনিরহাট জেলার ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ। এতে জেলায় বেড়েছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তার সাথে তালমিলিয়ে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যাও। ২৬ এপ্রিল থেকে ভারত বাংলাদেশের সীমান্তে যাতায়াত বন্ধ ও ২৪ মে থেকে বিভিন্ন সীমান্তবর্তী জেলায় চলছে
লকডাউন। সীমান্ত পথে সরকার বিধি নিষেধ আরোপ করলেও লালমনিরহাটের অরক্ষিত সীমান্ত পথে দু’দেশের মানুষের যাতায়াত বন্ধ হয়নি। করোনায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দু’দেশের মানুষরা জেলার একাধিক সীমান্ত পকেট গেট ব্যবহার করছেন। ফলে বুধবার (১৬ জুন) ভোর রাতে বানের পানির মত ভারতীয় গরু চোরাই পথে এসেছে। এসব গরুর মধ্যে পানবাড়ি বিজিবি ১৩টি ভারতীয় গরু আটক করেছে। এ ছাড়াও সীমান্তের বিভিন্ন পকেট পয়েন্ট দিয়ে নারী শিশু পাচারের বেশকিছু চিত্র এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
ফলে সব চেয়ে বেশি আক্রান্ত ঝুঁকিতে রয়েছে লালমনিরহাট জেলার মানুষজন।
জানা গেছে, সীমান্ত অপরাধ ঠেকাতে জেলার মোট সীমান্ত পথে বিজিবির তিনটি ব্যাটালিয়ন তথা ১৫, ৫১ ও ৬১ ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। কাঁটাতারের বেড়াবিহীন সীমান্ত পথে সীমান্তরর্ক্ষীদের নজরদারী ফাঁকি দিয়ে চলছে চোরাকারবারি ও সাধারণ মানুষের অবাধ যাতায়াত। দুই দেশের দালাল চক্রের মাধ্যমে চলছে মানুষ পারাপার। এদিকে আগামী কোরবানীর ঈদকে সামনে
রেখে সীমান্তের অন্তত ৩০টিরও বেশি পয়েন্ট দিয়ে প্রায় প্রতিরাতে গরু পারাপার করছে শতাধিক
চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। এসব গরু আবার প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় হাট-বাজারে। এ
ছাড়া জেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে দেশে প্রবেশ করছে কয়েক শত ট্রাক।
এসব ভারতীয় ট্রাকের সাথে আসা চালক ও সহকারী চালকরা স্থলবন্দরের বিভিন্ন হোটেলে খাবার খাচ্ছে এবং অবাধে চলাফেরাও করছেন।
একটি সুত্র জানান, কাঁটাতারের বেড়াবিহীন সীমান্ত গুলো প্রায় উম্মুক্ত। বুড়িতিস্তা, ধরলা ও তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। কোথাও কোথাও রয়েছে দূর্গম চরাঞ্চল। সীমান্তের এই দূর্বলাতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সামনের কোরবানির ঈদে গরুর চাহিদার উপর নির্ভর করে গরু পাচারকারিরা বেপোরয়া হয়ে উঠেছে। সীমান্তের দহগ্রাম, দৈইখাওয়া, কালীগঞ্জ, চাপারহাট, গোড়ল, কুটিয়ামঙ্গল, দূর্গাপর ও মোগলহাট সীমান্ত দিয়ে দে-দারছে আসছে ভারতীয় গরু। এসব গরু দেশী গরুর সাথে মিশিয়ে স্থানীয় বড়বাড়ি হাট, শিয়াল খোওয়া হাট, চাপারহাট, দূরাকুটি’র হাটে প্রকাশ্য
বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকি এসব গরু ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, বগুড়া, রংপুর-সহ নানা স্থানে
ট্রাকভর্তি করে পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে।
লালমনিরহাটে ২৮৫ কিলোমিটার সীমান্তে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি, রংপুর ৫১ বিজিবি ও রংপুর ৬১ বিজিবিকে সীমান্তে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে তিনটি পৃথক ব্যাটালিয়ন
দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সীমান্তে হঠাৎ গরুপাচার, মাদক পাচার,
নারী, শিশু পাচার ও মানুষ পাচার সহ নানা অবৈধ সীমান্ত ব্যবসা বেড়ে গেছে। এদিকে বেশ কয়েকটি সীমান্ত ঘুরে দেখা যায়, দিনের বেলায় কৃষি কাজের নাম করে ভারতীয়রা যেমন বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন তেমনি বাংলাদেশীরাও ভারতের অভ্যন্তরে একই কায়দায় প্রবেশ করছেন। এসব লোকের
অনেকের রয়েছে দু’দেশের জাতীয় পরিচয়পত্র। মাদক ব্যবসায়ীরা দুই দেশের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে অরক্ষিত সীমান্ত পথ দিয়ে ভারতে গিয়ে অবস্থান করছে। আর এভাবেই চলছে সীমান্ত পথে ভারত-বাংলাদেশের মানুষের অবাধ যাতায়াত। এ কারণে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছে লালমনিরহাট জেলার ১৫লক্ষাধিক মানুষ।
সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাটে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুই স্কুল শিক্ষক-সহ এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ২১জনের।
গত২৪ ঘন্টার ৭৫টি নমুনা পরিক্ষায় ১১টি সনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে মোট সনাক্ত ১৩৪২ তার মধ্যে সুস্থ ১১২২জন। লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, গত কয়েক দিন ধরে
লালমনিরহাটে করোনা শনাক্তের হার ৩৭-৩৮ শতাংশ, যা দুই মাস আগেও ছিল ১০-১১ শতাংশ। সীমান্ত পথে সরকার বিধি নিষেধ আরোপ করলেও লালমনিরহাটের অরক্ষিত সীমান্ত পথে দুই দেশের মানুষের যাতায়াত বন্ধ হয়নি।