তাহমিনা আক্তার, ঢাকা:: আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও আওয়ামী লীগের ভোটযুদ্ধ শুরু হচ্ছে ১ সেপ্টেম্বর থেকে। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা এই দলটি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্য জানান দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে দলটি পুরো অক্টোবরজুড়ে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখতে সচেষ্ট থাকবে। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে সরকার হটানোর দাবি নিয়ে মাঠে সক্রিয় বিএনপি-জামায়াতসহ রাজপথের বিরোধী দলগুলো।
গত ডিসেম্বর থেকে মধ্যজুলাই পর্যন্ত বিরোধী দলের কর্মসূচির দিনে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগে অনেকটা ভিন্নতা আসছে। তারা এখন আর কোনো কাউন্টার কর্মসূচিতে যাচ্ছে না। সর্বশেষ গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত বিশেষ বর্ধিতসভা থেকে নেতাকর্মীদের নির্বাচনি প্রচারণা নামার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে। ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নিজ নিজ এলাকার জন্য উপযোগী কর্মসূচি গ্রহণ করছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে রাজধানীসহ সারা দেশে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরগুলোতেও শোডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন এই দলটি। আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের একজন সদস্য বলছেন, ১ সেপ্টেম্বর তারুণ্য সমাবেশ ও ২ সেপ্টেম্বর সুধী সমাবেশকে নির্বাচনি সমাবেশও বলা যেতে পারে।
‘বিএনপি ও তাদের রাজনৈতিক মিত্ররা সরকার হটাতে সেপ্টেম্বরে টানা কর্মসূচি পালন করবে’ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন খবর বেশ ঘটা করে প্রকাশিত হয়েছে, আগামী দিন থেকেই সেপ্টেম্বর শুরু, কিন্তু এরই মধ্যে বড় কোনো কর্মসূচির ঘোষণা আসেনি বিএনপি বা তাদের মিত্রদের পক্ষ থেকে। উল্টো বিএনপি প্রতিষ্ঠার ৪৫তম দিনে (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে ছাত্রলীগ আয়োজিত ‘তারুণ্য সমাবেশ’ করে বড় ধরনের শোডাউন করবে আওয়ামী লীগ। শুধু ১ সেপ্টেম্বরই নয়, ২ সেপ্টেম্বরও দলটি সুধী সমাবেশের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা জানান দেবে। বিরোধী দলগুলোর নেতারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে দাবি করছেন ‘আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা নেই, নিরপেক্ষ ভোট হলে খুব বেশি আসন পাবে না,’ আগামী ১ ও ২ সেপ্টেম্বর পরপর দুদিন ঢাকায় শোডাউন করে বিরোধী দলের ওইসব বক্তব্যকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা চালাবে আওয়ামী লীগ। এই দুই দিন ঢাকা থাকবে আওয়ামী লীগের পুরো দখলে। দলটির টার্গেট হচ্ছে, রাজধানীতে জনসমুদ্র তৈরি করা। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে।
‘১ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে তারুণ্যের সমাবেশ।’ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এই সমাবেশের আয়োজন করছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে এই তারুণ্যের সমাবেশের আয়োজন করা হলেও বাস্তবে এটি হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার কৌশল। আর ২ সেপ্টম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট অংশ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন বিকেলে পুরান বাণিজ্যমেলার মাঠে এক বিশাল সুধী সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন এই দলটি। এ দিনও কয়েক লাখ লোক সমবেত করতে চায় দলটি।
২ ডিসেম্বরের সুধী সমাবেশ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২ সেপ্টেম্বর রাজধানী মহাসমুদ্র দেখবে, জনতার মহাসমুদ্র। সেই মহাসমুদ্র দেখার অপেক্ষায় আছি। ১ সেপ্টম্বরের তারুণ্য সমাবেশ ও ২ সেপ্টেম্বরের সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের ছাত্রসমাবেশ বা তারুণ্য সমাবেশ সফল করতে সাত নির্দেশনা দিয়েছে সংগঠনটি। ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ওই নির্দেশনার কথা জানানো হয়। এতে সারা দেশে ছাত্রলীগের সব ইউনিটের নেতাকর্মী, ছাত্র, তরুণ ও যুবকদের উপস্থিত থাকার আহ্বান জানানো হয়। ছাত্রসমাবেশে উপস্থিত ইউনিটগুলোর মধ্য থেকে সেরা ইউনিটকে সাংগঠনিকভাবে পুরস্কৃত এবং কোনো ইউনিট উপযুক্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে সাংগঠনিক জবাবদিহির ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। সমাবেশকে জনসমুদ্রে রূপান্তরিত করতে দেশের সব জেলা, থানা ও ইউনিট থেকে নেতাকর্মীদের আনার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
রাজধানীর দুই সমাবেশ সফল করতে সমপ্রতি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলার নেতাদের মতবিনিময় সভা হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওই সভার সূত্রমতে, আগামী ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার আশপাশের ১১ জেলা থেকে নেতাকর্মীরা সুধী সমাবেশে অংশগ্রহণ করবে। প্রতিটি জেলার জন্য আলাদা রঙের ক্যাপ বা গেঞ্জি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরের সব ওয়ার্ড ও থানা থেকে কয়েক লাখ নেতাকর্মী জনসভায় উপস্থিতি থাকবে। এ ছাড়াও ঐতিহাসিক ওই সুধী সমাবেশে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সুধী জনরা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রথমে আগস্টের শেষ দিন তারুণ্য সমাবেশ করার কথা থাকলেও তা একদিন পেছানো হয়। তবে আয়োজনের স্থান, সময় পরিবর্তন হয়নি। ১ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দেশের প্রতিটি মহানগর, জেলা-উপজেলার শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে বলে আশা প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সমাবেশকে কেন্দ্র করে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরাও প্রস্তুত। সম্ভাব্য বড় এই শোডাউনে অন্তত পাঁচ লাখ নেতাকর্মী অংশ নেবেন এমনটিই প্রত্যাশা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। গত ২৬ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ। ওই সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ‘আগামী ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে সারা দেশ থেকে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে জড়ো করার ঘোষণা দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আগেও এ দেশে বহু সভা-সমাবেশ, জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু শুধু শিক্ষার্থী বন্ধুদের নিয়ে এত বড় সভা আগে আয়োজিত হয়নি। এ কারণে আমরা বলছি, আগামী পয়লা সেপ্টেম্বরের ছাত্র সমাবেশ হবে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশ, যেখানে সারা দেশ থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী বন্ধু, তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হবেন।’ ছাত্র সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনাকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় উপহার দেয়ার শপথ নেবে বলে জানান ছাত্রলীগ সভাপতি।
ঢাকার সমাবেশে আওয়ামী লীগের টার্গেট কী জানতে আমার সংবাদের পক্ষ থেকে কথা হয় দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, আমরা ঢাকায় জনসমুদ্র দেখাতে চাই। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা রয়েছে তা দেখতে পাবে ঢাকাবাসী। ছাত্রলীগের তারুণ্য সমাবেশ ও আওয়ামী লীগের সুধী সমাবেশকে নির্বাচনি সমাবেশও বলতে পারেন বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের এই অন্যতম নীতিনির্ধারক।