ঝড়টা যে গোলরক্ষক ও ডিফেন্ডারদের ওপর দিয়ে যাবে, তা অনুমেয়ই ছিল। সবার চোখ ছিল কাতারের মতো এশিয়ার সেরাদের ঝড় কীভাবে সামাল দেয় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে দোহার আব্দুল্লাহ বিন খলিফা স্টেডিয়ামে শুক্রবার কাতারের আক্রমণগুলো রুখতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন বাংলাদেশের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা।
বাংলাদেশের জার্সিতে প্রথমবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলতে নামা গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো বেশ কয়েকটি সেভ করেছেন। তবে কাতারের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে যে মানের পারফরম্যান্স করার দরকার, তা করতে পারেননি বসুন্ধরা কিংসের এ গোলরক্ষক। হতে পারেননি ভারতের গোলরক্ষক গুরপ্রিত সিং। নাম্বার ওয়ান গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানার জায়গায় তাকে নামিয়েও সফল হতে পারেননি কোচ জেমি ডে।
তাই কাতারের মাঠে বড় ব্যবধানে হারল লাল-সবুজের দলটি। দোহায় শুক্রবার কাতারের কাছে ৫-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। ৪-১-৪-২ ফরমেশনে মাঠে নামে বাংলাদেশ। কাতারের মতো এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে কৌশলটা যে রক্ষণাত্মক হবে, সেটা জানাই ছিল। বল পজেশনে কাতার ছিল অনেক এগিয়ে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা বলের জন্য শুধু ছোটাছুটিই করেছেন; কিন্তু থামাতে পারেননি কাতারের খেলোয়াড়দের। লং পাসে কাতার ছিল বিপজ্জনক। আচমকা বল নিয়ে বপের মধ্যে ঢুকে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। দুই প্রান্ত দিয়ে তাদের করা আক্রমণগুলো সামলাতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন তপু বর্মণ-বিশ্বনাথ ঘোষরা। শুরু থেকে আক্রমণাত্মক খেলা কাতার লিড নেয় ম্যাচের ৯ মিনিটে। বাঁ প্রান্ত থেকে সতীর্থের ক্রস বপের মধ্যে খুঁজে নেয় আব্দুল আজিজ হাকিমকে। ঠান্ডা মাথায় তার নেওয়া ডান পায়ের শট চলে যায় বাংলাদেশের জালে।
বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের পায়ে বল গেলেই গ্যালারিতে আওয়াজ শুরু হয়। এ থেকেই বোঝা যায়, প্রায় দুই হাজার দর্শকের বেশিরভাগই যে প্রবাসী বাংলাদেশি। জামাল ভূঁইয়াদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য সবকিছুই করেছেন তারা। কিন্তু র্যাাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ১২৫ ধাপ ওপরে থাকা কাতারের সামনে যে পাত্তা পায়নি লাল-সবুজের দলটি। আসলে শারীরিক শক্তির সঙ্গে গতি এবং স্কিলে কাতারের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। গত বছরের ১০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ২-০ গোলে হারা বাংলাদেশ এদিন প্রথমার্ধেই হজম করে ফেলে দুই গোল। আবার বাংলাদেশও যে আক্রমণ করেনি, তা কিন্তু নয়। ২৯ মিনিটে দারুণ একটি আক্রমণ শানায় সফরকারীরা। জামাল ভূঁইয়ার বাড়ানো বল বিশ্বনাথ ঘোষ বপের মধ্যে ফেলতে গেলে কাতারের এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে বল চলে যায় বাইরে। জামালের নেওয়া কর্নার প্রতিহত করেন কাতারের খেলোয়াড়রা। তিন মিনিট পরই কাতারের আক্রমণ রুখে দেন জিকো। বপের মধ্য থেকে আকরাম আফিফের বাঁ পায়ের শট ডান প্রান্তে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন তিনি। তবে ৩৩ মিনিটে সেই আকরাম আফিফের অসাধারণ শট থামানোর সাধ্য ছিল না বসুন্ধরা কিংসের এ গোলরক্ষকের। বপের ডান প্রান্ত থেকে আফিফের ডান পায়ের বাঁকানো শট চলে যায় বাংলাদেশের জালে।
দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের জালে আরও তিনবার বল পাঠায় কাতার। ৭২ মিনিটে আলমোয়েজ আলীর বুলেট গতির পেনাল্টি শট ঝাঁপিয়ে পড়েও ঠেকাতে পারেননি জিকো। ৭৮ মিনিটে কাতারের চতুর্থ এবং নিজের দ্বিতীয় গোলটিও করেন আলমোয়েজ। ম্যাচের যোগ করা সময়ে বাংলাদেশের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন আকরাম আফিফ।