দেশে বেড়েছে হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ (এইচএফএম)। শিশুদের এ রোগটিকে অনেকেই চিকেন পক্সের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। এতে সাধারণত মুখ, পায়ের পাতা, হাঁটুর উপরে ও হাতের তালুতে ফোস্কার মতো র্যাশ হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই আপনাআপনিই ভালো হয়ে যায় হ্যান্ড ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস। তবে রোগটি অতিমাত্রায় সংক্রামক। তাই আক্রান্ত শিশুকে অন্য শিশুদের থেকে আলাদা রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
স্কুলে যাওয়া শিশুদের উচ্ছ্বলতায় ভাটা ফেলেছে হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস। রাজধানীর অনেক স্কুলেই শিশুদের মাঝে দেখা যাচ্ছে এ রোগটি। হাত পা কিংবা মুখে ও ফোস্কার মত র্যাশ ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক। যা দেখতে অনেকটাই চিকেন পক্সের মতো। হাত, পা ও মুখ আক্রান্ত হয় বলেই রোগটির নাম হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ। জ্বর দিয়ে রোগের শুরু, পর্যায়ক্রমে যা একশ’ দুই ডিগ্রি পর্যন্ত যায়। এরপরই মুখে দেখা দেবে ছোট ছোট সাদা আকৃতির ফুসকুড়ি। ঠোঁটের আশেপাশেও দেখা দেয় র্যাশ।
এসএসএমসি ও মিডফোর্ড হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. খন্দকার কামরুজ্জামান বলেন, মুখ থেকেই এটা শুরু হয়। তারপর যখন বাচ্চারা মুখে হাত দেয় বা শরীরের অন্যান্য জায়গায় হাত দেয় তখনও এটা সেসব জায়গায়ও ছড়িয়ে পড়ে। এজন্যই এটিকে জীবাণুবাহিত সংক্রামক রোগ বলা হচ্ছে।
চিকেন পক্সের সাথে এই রোগের পার্থক্য প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. খন্দকার কামরুজ্জামান বলেন, চিকেন পক্স শুরু হয় সেনট্রাম থেকে। এটা সাধারনত শরীরের এক জায়গায় প্রথমে দেখা দেয় তারপর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এইচএফএম ডিজিজটা শুরুই হয় মুখ থেকে তারপর এটা পেরিফেরার দিকে যায়। যেহেতু এটা সংক্রামক রোগ, তাই হ্যান্ডশেক, চুম্বন এমনকি বাচ্চাদেরকে আদর করতে গেলেও এটিতে আক্রান্ত হতে পারেন।
এইচএমএফ’র অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা কোনো ওষুধ নেই জানিয়ে ডা. খন্দকার কামরুজ্জামান বলেন, আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। এটি একটি সেলফ রেমিডিং ডিজিজ তাই ওষুধপত্রের দরকার হয় না। শুধুমাত্র সচেতনতা, হাইজিন, বাচ্চাদের যাতে পানিশূণ্যতা যেনো না হয়, খাওয়াদাওয়াটা ঠিকমতো মেইনটেইন করতে হবে। ৬-৭ দিন পরে এটা নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়।
বাংলাদেশে এ রোগ ব্যাপকভাবে কখনই হয়নি। সাধারণত প্রতি বছর বর্ষায় বাড়ে এর প্রকোপ। রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর রোগটি নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয়। দেখা হয় সাধারণ রোগ হিসেবেই।
আইইডিসিআর এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, সীমিত আকারে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এ সংক্রমণ প্রতিবছরই হচ্ছে। তবে যদি কোথাও এলাকাভিত্তিক খুব বেশি সংক্রমণ দেখা যায় তখনও কিন্তু এটা বাচ্চাদের মধ্যে সীমিত থাকবে না। এরকম যে ভাইরাসগুলো যেগুলো পাবলিক হেলথে অনেক বেশি সমস্যা তৈরি করে না সেগুলোর জন্য টিকার চেষ্টা আমরা নিজেরাও করি না।
এবং যেহেতু এটা এমনিতেই সেরে যায় তাই অ্যান্টি ভাইরাল নিয়েও এতটা ভাবা হয় না।কোনো স্কুলে শিশুদের মধ্যে একযোগে এ রোগ দেখা দিলে অবশ্যই স্কুল কয়েকদিন বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর। ডা. এ এস এম আলমগীর বললেন, আক্রান্তদের থেকে অন্তত ১ মিটার দুরত্ব বজায়ে রাখতে হবে। এই দুরত্ব না মানলে আপনিও আক্রান্ত হতে পারেন।