আশরাফুল হক,লালমনিরহাট:"যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে তালাক! কাজী নকল না দেওয়ায় আইনী অধিকার বঞ্চিত কিশোরীবধূ" শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর অভিযুক্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী ওমর আলীকে কৈফয়ত তলবের নোটিশ দিয়েছে লালমনিরহাট জেলা রেজিস্ট্রার।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) জেলা রেজিস্ট্রার খালিদ মোহাম্মদ বিন আসাদ এ নোটিশ দেন।
কৈফয়ত তলবের চিঠিতে সংবাদে প্রকাশিত বর-কনের আইডি /জন্ম নিবন্ধনের সনদসহ আগামী ২৬ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় ২০২৩ সনের সকল বিবাহ-তালাক রেজিষ্টার বহি নিয়ে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে স্ব-শরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত কাজী ওমর আলী লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার এবং দুর্গাপুর ছাবেরা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মৌলভী শিক্ষক।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ছাবেরা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী রুপালী খাতুন। প্রায় ৫ মাস পূর্বে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের গন্ধমরুয়া এলাকার আউয়াল মিয়ার ছেলে রাজু মিয়ার সাথে। কথা হয় বিয়ের একবছর পর জামাইকে যৌতুক বাবদ ৮০ হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্ত মাস না পেরোতেই স্ত্রীকে তার বাবার বাড়িতে রেখে টাকার জন্য শ্বশুরকে চাপ দিতে থাকে রাজু। একপর্যায়ে বিয়ের ৫ মাসেও সেই টাকা না পেয়ে গত ২৪ নভেম্বর স্ত্রী রুপালীকে তালাকের নোটিশ পাঠায় স্বামী রাজু মিয়া।
এদিকে, রুপালী-রাজু'র বিয়ে রেজিস্ট্রী করে কাজী কাবিননামা না দেওয়ায় আইনী অধিকার বঞ্চিতের শঙ্কায় পড়ে রুপালীর পরিবার।
রুপালীর বাবা আমিনুল হক বলেন, বয়স কম হওয়ায় মেয়ের বিয়েতে প্রথমে আমি রাজি হইনি। তখন ছেলের বাবা বলে, আমার পরিচিত কাজী আছে সমস্যা হবে না। রেজিস্ট্রীর দায়িত্ব আমার, শুধু কোনও ঢাকঢোল করা যাবে না। পরে ৮০ হাজার টাকা যৌতুকে বিয়ে ঠিক হয়। যা এক বছরের মধ্যে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিয়ের দিন দুপুর বেলা ছাবেরা খাতুন স্কুলের মৌলভী শিক্ষক কাজী ওমরকে সাথে নিয়ে ছেলে-ছেলের বাবা ও ঘটক জাহাঙ্গীর আমাদের বাড়িতে আসে। এরপর আড়াই লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিয়ে রেজিস্ট্রী ও পড়ান করে কাজী ওমর।
রুপালীর বাবা বলেন, বিয়ের পর থেকেই টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে ছেলে ও ছেলের বাবা। টাকা না দেওয়ায় একমাস পর মেয়েকে বাড়িতে রেখে যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এর আগেও ছেলের বিয়ে ও তালাক হয়েছিল। এখন আমার মেয়েকেও তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছে। রুপালীর বাবা আরও বলেন, আইনী ব্যবস্থা নিতে বিয়ের কাগজের জন্য কাজী ওমরের সাথে কয়েকবার যোগাযোগ করেছি। কিন্ত মেয়ের বয়স ১৮ পূরণ না হলে কাজী কোনও কাগজ দিতে পারবেন না বলে জানান।
ছেলের বাবা আউয়াল মিয়া বলেন, কাজী ওমর আমার ছেলের আগের বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রী করেছে, সে কারণে তাকে ডেকেছি। তবে কবিননামার জন্য আমরাও কাজীর কাছে গিয়েছি। কিন্তু মেয়ের বয়স পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাগজ দিবেন না বলে জানান তিনি।
দুর্গাপুর ছাবেরা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মৌলভী শিক্ষক ও মোগলহাট ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) ওমর বলেন, রাজুর আগে বিয়ে হয়েছিল। সেই বিয়ে ও তালাক আমার মাধ্যমে রেজিস্ট্রী হয়েছে। তবে রুপালীর বিয়ে রেজিস্ট্রী ও পড়ানের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
লালমনিরহাট জেলা রেজিস্ট্রার খালিদ মোহাম্মদ বিন আসাদ বলেন, কাজি বিয়ে রেজিস্ট্রী করে নকল না দেয়ায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা আমার নজরে আসে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে কৈফয়ত তলব করা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।