দীপ্ত কুমার, ঢাকা।। হাজারো মুসল্লির উপস্থিতিতে আমিন আমিন ধ্বনিতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের প্রথম জামাত রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১৪ মে) সকাল ৭টায় এ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমে সিনিয়র ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান।
ঈদের জামাত শেষে করোনা মহামারি থেকে মুক্তি এবং দেশ, জাতি ও মুসলিম মিল্লাতের বিশেষ করে ফিলিস্তিনসহ নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য দোয়া মোনাজাত করা হয়েছে। দেশ ও জাতির সুখ-শান্তি এবং সমৃদ্ধি কামনা করে আখেরি মোনাজাত করা হয়।
এর আগে ঈদের খুতবায় মুফতি মিজানুর রহমান বলেন, যারা সঠিক নিয়মে সিয়াম সাধনা করেছেন এবং রোজা পরবর্তী গুনাহমুক্ত জীবনযাপন করবেন ঈদুল ফিতর আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য পুরস্কার। তিনি মুসল্লিদের গুনাহমুক্ত জীবনযাপনের আহ্বান জানান। আরও বেশি করে এবাদত বন্দেগির তাগাদা দেন।
মুফতি মিজান করোনায় ধনী-গরীব সকলকে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, করোনায় অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ান, সাহায্য করেন, বেশি করে সাদকা দিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন। তাহলে আল্লাহ পাক আমাদের উপর বেশি খুশি হবেন।
প্রথম জামাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন পেশাজীবিসহ হাজার হাজার মুসল্লি অংশ নেন।
ঈদের ফিতরের প্রথম জামাতে মুসল্লিদের মাস্ক পরে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক কাতার দূরত্বে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। মসজিদে সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কোলাকুলি ও হাত মেলানো থেকে বিরত ছিলেন অধিকাংশ মুসল্লি। বরং তারা জামাত শেষে সালাম ও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করে আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
ঈদের প্রথম জামাত শুরুর আগে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানানো হয় মুসল্লিদের।
সকাল ৬টায় মুসল্লিদের মসজিদে প্রবেশের জন্য গেট খুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ শুরু করেন। বায়তুল মোকাররমের প্রথম জামাতেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লির ঢল নামে। রাজধানীর দূর দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা শরিক হন। নারী ও শিশু-কিশোরদের উপস্থিতিও ছিল অনেক। মসজিদে হাত ধোয়া, জীবাণুনাশক কক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রথম জামাতে অংশ নিতে সকাল সাড়ে ৬টার আগেই বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লিদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। করোনা ঠেকাতে মুখে মাস্ক পরা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। মুখে মাস্ক পরা থাকলে মুসল্লিদের মসজিদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়। পুলিশি তল্লাশি শেষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই মুসল্লিরা প্রথম জামাতে অংশ নেন।
মসজিদের ভেতরে কাতার ফাঁক রেখে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজের জন্য কাতারবন্দি হয়ে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। বায়তুল মোকাররমের ঈদের জামাতে স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ নিশ্চিত করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শীর্ষকর্তারা কাজ করেন।
এদিকে বায়তুল মোকাররমে ঈদের আরও চারটি জামাত পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টায় দ্বিতীয় জামাত, সকাল ৯টায় তৃতীয় জামাত, সকাল ১০টায় চতুর্থ জামাত এবং বেলা পৌনে ১১টায় পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত হবে।
বায়তুল মোকাররমে দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন একই মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী। তৃতীয় জামাতে ইমামতি করবেন ওই মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। চতুর্থ জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম। পঞ্চম ও শেষ জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ূর রহমান খান।
পাঁচটি জামাতের কোনোটিতে ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে ১৩ দফা শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- নামাজের সময় মসজিদে গালিচা বিছানো যাবে না, নামাজের আগে পুরো মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, জায়নামাজ নিয়ে আসতে হবে মুসল্লিদের, সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, মসজিদে প্রবেশের আগে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে, মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না, নামাজের কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
এ বছর বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ায় সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনায় জাতীয় ঈদগাঁয় ঈদের প্রধান জামাত বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে খোলা জায়গায় নামাজ না আদায়ের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এজন্য ঈদের নামাজ মসজিদে মসজিদে আদায় হচ্ছে।