মুহাম্মদ সরোয়ার উদ্দিন:: যতদিন বাবা নামক যোদ্ধা, বীর সৈনিক বেঁচে আছেন আমি কখনোই বলবো না যে আমার কোনো বন্ধু নেই। আমার শৈশবের বন্ধু, কৈশোরের বন্ধু, যৌবনের বন্ধু, আমার সব সময়ের বন্ধু তিনি। যার হাতের উপরে আমি সেই শিশু বয়স থেকে শক্ত হয়েছি, বসতে শিখেছি, হাঁটতে শিখেছি বাবার আঙুল ধরে। বাবার বলা শব্দ অনুসরণ করে আমি কথা বলতে শিখেছি।
হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেলে আমার চেয়ে যে মানুষটা বেশি ব্যথা অনুভব করতো সে আমার বাবা। যার ভালোবাসা থেকে বুঝতে শিখেছি ভালো আর মন্দের তফাত। তার হাতের উপরে চড়ে শৈশবে সাঁতার শিখেছি। আমার ওজন যার কাঁধে কখনো ভারী হয়নি, যে আমার বিনামূল্যের মানবগাড়ি। আমার শৈশবের খেলার সাথি, মানুষ ঘোড়া। আমাকে বুকের উপর শুইয়ে ঘুম পাড়ানো কোমল বিছানা, আমার সব সময়ের ছায়া, আমার বৃক্ষ বটগাছ।
আমার কৈশোরের শিক্ষক, বিপদের রক্ষক, আমার অসুখের ডাক্তার, কবিরাজ। যার কাছে আমার চাওয়া জিনিসের অভাব আছে কিন্তু অপূর্ণতা নেই, যে আমার চাহিদার জোগানদাতা। আমার সব প্রয়োজনের টাকার গাছ, এটিএম মেশিন। সেই মানুষটা আমার শুধুই বাবা নয়, আমার আত্মার বন্ধু। সবাই ছেড়ে দেয়, ছেড়ে যায়। বাবা নামক বন্ধু কখনো ছেড়েও দেয় না, ছেড়ে যায়ও না।
মায়ের পরে সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ কষ্ট করা মানুষটা বাবা, আমরা কখনো তাকে বলতে পারি না, বাবা তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি। বাবা মানুষটাও কখনো আমাকে তার কষ্ট দেখায়নি, বরং তিনি হাসি মুখে সব ইচ্ছে আর স্বপ্ন পূরণ করেছে আমার। আমার কোন জিনিস লাগবেই বললে সে হাসি মুখে ‘অসুবিধা নেই’ বলে আমার চাহিদা পূরণ করতো।
আল্লাহর কাছেও বাবার জন্য প্রার্থনা করি, আল্লাহ আমার বাবার হায়াত দীর্ঘ করে দাও। তার জন্য কিছু করতে সামর্থ্য দিয়ো রাব্বুল আলামিন। কখনো নিজের সামর্থ হলে বাবাকে তোমার পবিত্র কাবা ঘরের মেহমান বানাবো আল্লাহ, মানুষটার প্রতি অনেক ভালোবাসা আমার, কিন্তু কখনো বলা হবে না।
এমন কিছু নেই বাবার ঋণ শোধ করার, পৃথিবীতে এমন কিছু তৈরি হয়নি কেন সেটার জন্য আফসোস করি। কারণ মানুষটা এতকিছু করে গেছে জীবনে, তার জন্য যদি কিছু করতে পারতাম তবে নিজের ভিতরে প্রশান্তি পেতাম। কিন্তু কিছু ঋণ শোধ করার যায় না। বাবা, তোমাকে মিস করি। প্রবাসে জীবন যাপন কত কষ্ট বুঝেছি কিন্ত তুমি কখনো আমাকে তা বুঝতে দাও নাই আমি কষ্ট পাবো বলে। পৃথিবীর সব বাবা সুখে থাকুন, শান্তিতে থাকুন; এটিই কামনা করি।