রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, স্টাফ রিপোর্টার : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা মজিদপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান আকন্দকে এক নারীর সাথে বদ্ধ ঘরে আটকসহ টাকা লেনদেনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান আকন্দের বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই একটি তদন্ত কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন ২৯ গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
আব্দুল মান্নান আকন্দ উপজেলা প্রধান শিক্ষক কল্যাণ সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। তিনি দৈনিক সমকাল ও মাধুকর পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সাংসদ ও বেলকা মজিদপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বেলকা মজিদপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান আকন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে শীঘ্রই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি তদন্ত করে আমাদেরকে রিপোর্ট দিলে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব।
আরো পড়ুন: সুন্দরগঞ্জে বদ্ধ ঘরে নারীসহ প্রধান শিক্ষক জনতার হাতে আটক!
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে চেয়ার বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই বিদ্যালয়ের আমি সভাপতি এটা সত্য। তবে কোন প্রকার নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নাই। যদি নিয়োগ বাণিজ্য হয়ে থাকে এটা সুষ্ঠু তদন্ত হবে। আর কেউ যদি করে থাকে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গত শনিবার সুন্দরগঞ্জ পৌর শহরের আল জবেদ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ওই প্রধান শিক্ষক মান্নান আকন্দের ব্যক্তিগত অফিসে নারীসহ জনতার হাতে আটকের ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শনিবার বিকেলে ঐ নারীসহ অফিস কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন মান্নান আকন্দ । দীর্ঘ সময় পার হলে বিষয়টি রহস্যজনক ভেবে স্থানীয়রা ঐ কক্ষে তাদেরকে আটক করেন। ঘটনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেলে উৎসুক জনতার ভীর জমে। পরে প্রভাবশালী একটি মহলের হস্তক্ষেপে প্রধান শিক্ষক মান্নান আকন্দ রক্ষা পান বলে জানা গেছে।
এনিয়ে একটি ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, আটককারীদের প্রধান শিক্ষক বলেন, দরজা বন্ধ করাটা আমার ভুল হয়েছে। ওই মহিলা আমার পিয়নের মা। পরে দম্ভোক্তি করে বলেন, তোমরা আমাকে চেনো-না! আজকে ৩০ বছর ধরি তোমাদের সাথে থাকি, আর আজকে তোমরা আমাকে চেনো-না। তোমরা ভাবছো অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য দরজা বন্ধ করেছি। চাকরির লেনদেন বিষয়ে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে । তবে, আটককারীদের এক প্রশ্নের জবাবে ঐ নারীও ভুল স্বীকার করে বলেন,' আমার কোন অভিযোগ নাই'।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান আকন্দের মুঠোফোনে কল করা হলে এসব ঘটনা অস্বীকার করে তিনি বলেন, কিছু ছেলেপেলে এমনিতেই এসেছিল ; পরে সমাধান হয়েছে। বদ্ধ ঘরে আপনি নারীসহ কেন? এমন প্রশ্ন করাতে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।
এদিকে ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার ছেলেকে ঝাড়ুদার থেকে অফিস পিয়ন হিসেবে নিযুক্ত করার বিষয়ে গিয়েছিলাম। খরচ বাবদ কিছু টাকা ওই প্রধান শিক্ষককে দিয়ে এসেছেন বলে জানান তিনি। তবে বদ্ধ ঘরের কথা ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন তিনি।
এব্যাপারে উপজেলা প্রধান শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব খোকন বলেন, আমরা খুব শীঘ্রই একটি মিটিং ডেকে ঘটনা গুলো পুনরায় শুনে তদন্ত পূর্বক সাংগঠনিক ভাবে ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মমিন মন্ডল পুরো ঘটনা এবং তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে মুঠোফোনে বলেন, মাননীয় এমপি মহোদয় যেভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করবেন কিংবা যেভাবে ব্যবস্থা নিতে বলবেন আমরা সেভাবেই ওনাকে সহোযোগিতা করবো।