ফেনীর জেলার সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব ও এসিল্যান্ড বিরুদ্ধে এস্কেভেটর মেশিনে অগ্নিসংযোগ,মৎস্য খামারে ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব সুজাপুর গ্রামের বেড়িবাঁধ এলাকায় সোমবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত স্কেভেটর মালিক,শতাধিক মৎস্য খামারী তাদের বিচারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে।
ভুক্তভোগীরা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, গত শনিবার (১৪ অক্টোবর) সন্ত্রাসী কায়দায় কোন প্রকার আগাম নোটিশ কিংবা পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই অবৈধ স্থাপনার অজুহাত দেখিয়ে এবং রাস্তা চলাচলে বাঁধা সৃষ্টির অভিযোগ এনে চর খোয়াজ, চর লামছি, থাক খোয়াজ লামছির মৎস্য ব্যবসায়ীদের মাছের খামারের ঘর ভাংচুর, মাছের খাদ্য নষ্ট, মালামাল লুটপাট, স্কেভেটর মেশিনে অগ্নিসংযোগ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এ্যাসিল্যান্ড।
এদিকে স্কেভেটর মালিক জামসেদ আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, গত বছর আমার স্কেভেটর মেশিন দিয়ে ব্যক্তি মালিকানার একাধীক দিঘী সংস্কারের জন্য আমার স্কেভেটর মেশিন ভাড়া দেওয়া হয়। সংস্কার কাজ শেষে বেতনভুক্ত কর্মচারীর তত্তাবধায়নে রাস্তার পাশে মেশিন রাখা হয়। গত শনিবার বিকালে ইউএনও স্যার আমাকে ফোন দিয়ে স্কেভেটর মেশিন সরিয়ে নিতে বলেন উত্তরে কেন সরাবো জানালে তিনি ফোন কেটে দেন। সন্ধ্যার পর কর্মচারীর মারফতে জানতে পারি টিএনও আমার ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের স্কেভেটর মেশিনটি অগ্নিসংযোগ করে পুরোপুরি পুড়িয়ে দিয়েছে। রাতে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে আমাকে ফিরিয়ে দেন। আমার স্কেভেটর মেশিনের পাশে আরেকটা মেশিন থাকলেও টিএনও সেটির কোন ক্ষতি করেনি। কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আর্থিক ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে তিনি আমার মেশিনটি পুড়িয়ে দেন। এ বিষয়ে টিএনওর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করবে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে মৎস্য চাষী আবুল কাশেম, শেখ রাসেল মিষ্টার,সালাউদ্দিন, আকবর হুমায়ুন,ডাক্তার শাহজাহান, মোহাম্মদ মিলন বলেন, সরকারেরর কাছ থেকে লিজ ও ব্যক্তি মালিকানার জমিতে বৈধ প্রক্রিয়ায় দির্ঘদিন ধরে আমরা মৎস্য খামার গড়ে তোলে মাছ চাষ করতেছি। গত কয়েকমাস ধরে প্রশাসনের জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। কোন নোটিশ কিংবা আগাম সতর্ক না করে প্রশাসনের লোকজন আমাদের মৎস খামারের ঘর ভাংচুর ও মালামাল লুট করছে। গত তিন দিন পূর্বে টিএনও এবং এসিল্যান্ড পুলিশ নিয়ে এসে আমাদের মৎস খামারের ৫/৬টি ঘর ভাংচুর চালিয়ে ঘরে রাখা মাছের খাবার নষ্ট করে এবং টাকা ও মোবাইল লুট করে। কি কারনে করছে কেন করছে তার কোন সন্তোষজনক কারন তারা বলছেনা। আমরা যেখানে মৎস্য খামার গড়ে তুলেছি সে জমিগুলো অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য সরকারের অধিগ্রহনকৃত এলাকার আওতার মধ্যে পড়েনি। সরকার জমিগুলো অধিগ্রহন করবে এরকম কোন নোটিশ দেয়নি।
উপকূলীয় অঞ্চল হওয়াতে জমিগুলোতে ধান উৎপন্ন হয়না তাই আমরা মৎস্য খামার গড়ে তোলে মাছ চাষ করে সোনাগাজী ফেনীসহ চট্টগ্রাম জেলার মাছের চাহিদা পুরন করছি। মাছ চাষের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর থেকে আমাদের প্রনোদনা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের খামারের যে জমিগুলো সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া সেগুলো যদি প্রয়োজন হয় সরকার নিয়ে যাবে তাতে আমাদের কোন সমস্যা নেই। সরকার আমাদের নোটিশ দিলে আমরা নিজ থেকে সরে যাবো কিন্তু কোন বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরন না করে টিএনও এবং এসিল্যান্ড কেন আমাদের খামার ভাংচুর, লুটপাট করে আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমাদের মৎস্য খামার এলাকায় অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ কর্মকর্তাদের মৎস্য খামার থাকলেও তাদের খামারে কোন ভাংচুর ও লুটপাট হয়না। আমরা অসহায় বলে আমাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। আমারা জেলা প্রশাসককে জানালে তিনি আমাদের অধিগ্রহন ও লিজ বাতিল না করা পর্যন্ত নির্ভিগ্নে মাছ চাষ করতে বলেন কিন্তু তারপরও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন ও মানবন্ধনে অংশগ্রহনকারীরা সরকার ও প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে এসিল্যান্ড সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন যা বলার ইউএনও স্যার বলবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব বলেন, স্কেভেটর পোড়ানোর সাথে আমাদের কোন সংশ্লিতা নেই। চর খোয়াজ, চর লামছি, থাক খোয়াজ লামছির মৎস্য ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে চর দখল করে খাস জমিতে মৎস চাষ করছে। আমরা অবৈধ দখল মুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছি। লুটপাট ও ভাংচুরের অভিযোগ সঠিক না।
তিনি আরো বলেন, ভাটাটিয়া লোক দিয়ে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। আমি আগে থেকে জানলে তাদের এসব করতে দিতামনা। ব্যবসায়ীদের কোন অভিযোগ থাকলে কাগজপত্র নিয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুক।