মুহাম্মদ রাসেল উদ্দিন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।। চলতি রবি মৌসুমে ভুট্টার রেকর্ড পরিমাণ চাষ হয়েছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে। আগাম জাতের এলব্রুস সহ উচ্চ ফলনশীল বেশ কিছু জাতের ভুট্টার চাষে সফলতার মুখ দেখছেন কৃষকরা। একসময় চরাঞ্চলের মানুষ শুধু চীনাবাদামের আবাদ করলেও বর্তমানে তারা ভুট্টারো আবাদ করছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় খরচ কম ও অধিক লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এখানকার কৃষকরা। এবার বাম্পার ফলনে লাভবানের আশায় কৃষকরা। কৃষিবিদরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারে চলতি মৌসুমে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নেমেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কিন্তু এবার ভুট্টা চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এবারে উপজেলা জুড়ে ১৮-২০ টি জাতের ভুট্টার চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় প্রতি বিঘায় সম্ভাব্য গড় ফলন ধরা হয়েছে ২৭-২৮ মণ। গত বছরের ধকল কাটিয়ে এবার স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন কৃষকরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জমিগুলোতে আগামজাতের কিছু কিছু ভুট্টা ঘরে তুলছেন তারা। তবে মাস খানেক পরে পুরোদমে ভুট্টা সংগ্রহ ও মাড়াই শুরু হবে।
উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের ঝাউকুঠি গ্রামের মোঃ বাদশাহ মিয়া (৫৫) এবারে ঝাউকুঠির চরে ৩ বিঘা জমিতে ভূট্টার চাষ করেছেন। তিনি জানালেন ‘কয়েক দফা বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জমিতে আগাম জাতের ভুট্টার চাষ করেছেন। তার মধ্যে হাইব্রিড এলব্রুস জাতের ভুট্টা ঘরে তোলা শুরু করে দিয়েছেন। ফলনও হয়েছে বেশ। মাড়াই শেষ হলেই বাজারজাত করা শুরু করে দিবেন।' চর গোরকমন্ডল এলাকার জাহিদুল (২৪) বলেন, ‘এবারে তিনি ১২ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। ভুট্টা চাষে সার কম লাগে। এছাড়া, সেচ, কীটনাশক ও নিড়ানি লাগে না। একেবারে কম খরচে ও স্বল্প সময়ে এ ফসল ঘরে তোলা যায়। বর্তমান বাজারে চাহিদা ও দাম দুটোই ভালো রয়েছে।থ
অটো ক্রপ কেয়ার লিমিটেডের টেরিটরি অফিসার মোঃ রুবেল হক জানালেন, তাদের উন্নত জাতের এলব্রুস ভুট্টায় বিঘাপ্রতি ৩৫-৪০ মণ ফলন পাওয়া যায়। বাজারে এখন প্রতি মণ ভুট্টা ৮০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমি চাষ করতে (চাষ, বীজ, সার, সেচ) খরচ হয়েছে ৭-৮ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে এতে প্রায় প্রতি বিঘাতে লাভ হবে প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা। প্রতি বছরই ধানের দরপতনের কারণেই কৃষকদের লোকশান গুনতে হচ্ছে। তাই ভুট্টা অল্প খরচে লাভজনক হওয়ায়, বিকল্প হিসেবে অন্য ফসলের পাশাপাশি ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুবুর রশিদ বলেন, ‘কম খরচে বেশি লাভের আশায় কৃষকরা এবার বোরো ধানের জমিতে আগাম জাতের ও অধিক ফলনশীল পুষ্টি সমৃদ্ধ দানাদার জাতীয় ভুট্টা চাষ করছেন। প্রতিবছর তুলনামূলক ভালো ফলন হওয়ায় ভূট্টার চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছর বিঘাপ্রতি ভুট্টা উৎপাদনের পরিমাণ ২৭-২৮ ধরা হলেও ঘরে তোলা ভূট্টায় ফলন দেখা গেছে ৩৫-৪০ মণ।
ভূট্টার নানামুখী ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে ভালো দাম ও চাহিদা রয়েছে। আমাদের কৃষি বিভাগ থেকে বীজ, সার, কীটনাশক দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করা হয়েছে। জমিতে রোগবালাই দমনের জন্য মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।