নিজস্ব প্রতিবেদন | ঈদের পর থেকে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও পোশাক, বস্ত্রসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খোলা রাখতে চান মালিকরা। সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, ২৩ জুলাই থেকে শিল্পকারখানা চালু থাকবে কি-না, সে বিষয়ে আগামীকাল (শনিবার) সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখান থেকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে তারা জানান। বৈঠকে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ টেরিটাওলে অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিজিএমইএ নেতারা বলেন, দেশের বৃহত্তর রফতানি আয়ের এই খাতটি যেন উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারে এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারে সেই উদ্দেশ্যে এমন দাবি জানানো হয়।
বৈঠক শেষে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান সাংবাদিকদের বলেন, সরকার নতুন করে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। আমরা সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছি। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর জন্য বলেছি। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আমরা চিঠি দিয়েছি। বিধিনিষেধের মধ্যে যে সময়টুকু কারখানা বন্ধ থাকবে, তার মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পগুলো কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সে বিষয়গুলো জানিয়েছি। সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সে অনুযায়ী বিবেচনা করতে বলেছি। আমাদের আবেদন শিল্পকারখানা যেন খোলা থাকে। অন্যথায় এটার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এ শিল্পে। উইন্টার ও ফল সিজনের শিপমেন্টগুলো ১৫ আগস্টের মধ্যে করতে হয়। এমন সময় গার্মেন্টস শিল্প দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকলে দেউলিয়া হয়ে যাবে এ শিল্প। পোশাক কারখানা বন্ধ থাকবে এটা শুনেই বায়াররা অর্ডার স্লো করে দিয়েছে। তাই, আমাদের দাবি সবকিছুর জন্য বিধিনিষেধ থাকলেও পোশাক শিল্প যেন এ সময় খোলা থাকে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘সোয়েটার, জ্যাকেট, হুডির অল্প সময়ের জন্য সিজন থাকে। সে কারণে এই শিপমেন্টগুলো যদি দিতে না পারলে কারখানাগুলো দেউলিয়া অবস্থার মধ্যে চলে যাবে। ক্লোজিং ভীষণ সমস্যায় পড়ে যাবে। এজন্য জীবন-জীবিকার সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছি। শনিবার সভা আছে, সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। গত বছর করোনার সময় চার বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছিল। অর্ডারগুলো ধীরে ধীরে ফিরে পেয়েছি। কিন্তু এই বিধিনিষেধ ঘোষণা শোনার পর থেকে বায়াররা অর্ডার স্লো করে দিয়েছে, বন্ধ করে দিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে অনুরোধ করেছি। কারা বিবেচনা করবেন বলে আশা করছি। শিপমেন্ট করতে না পারলে অর্ডার ক্যানসেল হয়ে যাবে। শিপমেন্ট যাতে করতে পারি, সেই সহযোগিতা চাচ্ছি।’
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, প্রধানমন্ত্রীকে লেখা উনাদের চিঠি পেয়েছি। চিঠিটি যত দ্রুত সম্ভব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাব। লকডাউন চলাকালে শিল্প-কারখানা খোলা থাকবে কিনা, সেটি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা আপনাদের পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বুধবার মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করে মঙ্গলবার আদেশ জারি করেছে। একই সঙ্গে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত ফের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ অবস্থায় পোশাক কারখানা খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন মালিকরা।
পোশাক শিল্পে বিপর্যয়ের শঙ্কা : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ঈদুল আজহা পরবর্তী লকডাউনে পোশাক শিল্প বন্ধের সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এতে রপ্তানি আদেশ বাতিল, নতুন অর্ডার প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তাসহ তৈরি পোশাক শিল্পে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, পোশাক কারখানা বন্ধ রাখা হলে চলমান রপ্তানি আদেশসমূহ ক্রেতার নির্ধারিত লিড টাইমের মধ্যে জাহাজীকরণ করা সম্ভব হবে না। বর্তমানে আমেরিকা ও ইউরোপে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে পোশাক বিক্রি বেড়েছে। চলমান রপ্তানি আদেশ যথাসময়ে জাহাজীকরণ করতে না পারলে ভবিষ্যতের অর্ডার গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, ঈদের পর ১৪ দিন বন্ধে যদি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ডেলিভারি না হয়, তাহলে আমদানি কনটেইনারের জট সৃষ্টি হবে।