ঢাকাবুধবার , ৫ জুন ২০২৪
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পেশায় ব্যাংকার হয়েও শখের বসে করেছেন গরুর খামার

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
জুন ৫, ২০২৪ ১০:০৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট: পেশায় ব্যাংকার হয়েও শখের বসে করেছেন গরুর খামার রাসেল। কোরবানির জন্য প্রস্তুত লালমনিরহাটের  রাসেলের খামারের ২৫ টি গরু। একেকটির দাম দুই লাখ টাকার উপরে। ঘাস,খড় ও ভুষি খাইয়ে গরু মোতাটাজা করেন তিনি। খামারি রাসেল মাহমুদ আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের হাজীগঞ্জ ধনীটারী এলাকার জেন্দাল হকের ছেলে। পেশায় ব্যাংকার হলেও শখের খামারে তার গরু রয়েছে ৭০ টি। 

জানা গেছে, ছোট বেলা থেকে গরু ছাগল পালা শখ ছিল রাসেল মাহমুদের। সেই শখ থেকে প্রথম দিকে বাড়িতেই ২/৪টি করে গরু পালন করে মোটাতাজা করা শুরু করেন তিনি। বেশ মুনাফা পেয়ে বাণিজ্যিক ভাবে গরুর খামার করার স্বপ্ন বুনেন তিনি। আস্তে আস্তে খামারের পরিধিও বাড়ান তরুন এ উদ্যোক্তা। 

প্রতিবছর কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে খামার বাড়াতে থাকেন। এরই মাঝে পড়ালেখা শেষ করে তিন বছর আগে এনআরবি ব্যাংকে চাকরিও পান রাসেল মাহমুদ। চাকুরি করলেও গরুর খামার নষ্ট করেননি। বরংচ বড় করেছেন। বাড়ির গরু দেখাশোনা করেন তার বাবা জেন্দাল হক। হার্ডিসার গরু কিনে খামারে যত্ন করে গরু মোটাতাজা করা হয়। খামারটি বাণিজ্যিক ভাবে করায় সন্তানের নামানুসারে খামারের নামকরন করেন সাফা এগ্রো। আড়াই বছর আগে তার খামার দেখে কর্মসংস্থান ব্যাংক সহজ শর্তে প্রায় ৫৮ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করেন। সেই ঋণে খামার বড় করেন তিনি। এখন তার খামারে বিভিন্ন ওজনের ৭০ টি গরু রয়েছে। প্রতিটি গরু উত্তনমানের। ঘাস, খড় আর ধানের গুড়া ভুষি ছাড়া অন্য কিছুই খাওয়ানো হয় না খামারের গরুগুলোকে। বলা চলে প্রাকৃতিক খাবারেই গড়ে উঠেছে তার খামার। এ কারনে তেমন কোন রোগ বালাইও নেই এ খামারে। 

গরুর খাবারের জন্য প্রায় ৬ দোন (২৭ শতাংশে দোন) জমিতে উন্নত মানের ঘাসের চাষ করেছেন রাসেল মাহমুদ। এ ছাড়াও নিজেদের ১০ দোন জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ করে সেই ভুট্টা স্পালিং করে খামারেই ফিট প্রস্তুত করে গরুকে খাওয়ান। এই স্পালিং বাজারের ফিটের চেয়ে শতগুন পুষ্টিকর ও নিরাপদ। এ কারনে তার খামারে রোগ বালাই অনেক কম। এ ছাড়াও প্রাণি সম্পদের তত্ত্বধানে নিয়মিত টিকা ও ভ্যাক্সিন দেয়া হয় গরুদের। 
প্রথম দিকে নিজে খামারে কাজ করলেও বর্তমানে খামার বড় হওয়ায় এবং তার নিজের চাকরির সুবাধে বাহিরে থাকায় ৫ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন তার খামারে। আর এ খামার দেখভাল করেন তার বাবা জেন্দাল হক। তিনিও সন্তানের মতই গরুগুলোর যত্ন নেন। সময় করে গোসল, খাওয়ানো সব কিছুই। কর্মস্থল থেকেও ডিজিটাল যুগে সিসি ক্যামেরায় খামার দেখে পরামর্শ দেন রাসেল মাহমুদ। আসন্ন ঈদ উল আযাহা উপলক্ষ্যে এ খামারে মোট ২৫ টি গরু প্রস্তুত রয়েছে বিক্রির জন্য। প্রতিটি গরুর ওজন প্রায় ৮/৯ মণ। যার মুল্য দুই লাখ টাকার উপরে। কিছু ছোট গরু রয়েছে যা লাখ টাকার উপরে। এ বছর বাহিরের বড় বেপারী না আসায় ক্রেতা সংকটে দুঃচিন্তায় রয়েছেন এ খামারি। তাদের ধারনা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারতীয় গরু আসায় গরুর চাহিদা কমেছে। তাই লোকসানের শ্বঙ্কাও রয়েছে এ খামারির। প্রাকৃতিক খাবারে গরু বড় করলে খরচ বেশি হয়। তাই ভাল বাজার না পেলে লোকসানের আশংকাও রয়েছে। 

রাসেল মাহমুদের বাবা জেন্দাল হক বলেন, আগে ব্যবসা করতাম। ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করত। এখন বড় ছেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে, ছোট ছেলে ব্যাংকার, দুই মেয়ে কলেজের শিক্ষক। ছোট বেলা থেকে রাসেল মাহমুদের গরু ছাগল পালনের প্রতি বেশ ঝোক ছিল। পরে ধিরে ধিরে খামার গড়ে তুলে। এখন ছেলের খামার দেখাশোনা করি। শ্রমিকরা কাজ করে। আমি সন্তানের মতই গরুগুলোর যত্ন নিয়ে থাকি। আমরা ঘাস খড় ভুষি আর ধানের গুড়া খাওয়াই। কোন ধরনের ইনজেকশন দেয়া হয় না। এ কারনে উপজেলা প্রাণি সম্পদের লোকজন আমাদের খামারকে বেশ পছন্দ করে। যখন যা করা দরকার তারা পরামর্শ প্রদান করেন। এবারে ঈদের জন্য ২৫ টি গরু প্রস্তুত করছি। এসব গরু মাত্র ৮ মাসে আগে ৮০/৯০ হাজার টাকা দরে ক্রয় করে পরিচর্যা করেছি। এখন একেকটি ওজন প্রায় ৮/৯ মণ। বাজার মুল্য দুই লাখের উপর। 

রাসেল মাহমুদ বলেন, অনেকেই গরু মোটা করতে ইনজেকশন ব্যবহার করেন। আমাদের খামারে সম্পুর্ন রুপে এমন ইনজেকশন মুক্ত এবং প্রাকৃতিক খাবারেই বড় হচ্ছে এসব গরু। কোরবানির জন্য ২৫ টি গরু প্রস্তুত রয়েছে। বাহিরের কিছু ব্যাপারী অনলাইনে যোগাযোগ করছে। তবে গতবছরের মত চাহিদা নেই। তবে ঈদ বাজার ঘনিয়ে আসলে চাহিদা যেমন বাড়বে তেমনি ব্যাপারীরাও ভিড়বে। তবে ভারতীয় গরু আসায় বাজারে গরুর চাহিদা কমেছে এবং লোকসানের শ্বঙ্কা করছে খামারিরা। কারন, গরুর খাবারের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। অপর দিকে ভারতীয় গরু আসায় চাহিদা কমেছে। কোরবানির পশু ক্রয় বিক্রয়ের উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগে অনলাইন প্লাটফরমে যুক্ত রয়েছি। সেখানেও বেশ সাড়া পাচ্ছি। তবে কিছু দিনের মধ্যে গরু বিক্রি করবেন বলেও জানান খামারি রাসেল মাহমুদ। 

আদিতমারী উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার ডা. স্বপন চন্দ্র সরকার বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পুর্ন দেশি খাবারে গড়ে উঠেছে এই খামার। এখানে খামারি নিজে ভুট্টা গাছ থেকে ফিট তৈরী করে গরুকে খাওয়ান। যা স্পাইলিং বলে। এটা খুবই পুষ্টিকর ও নিরাপদ। এ খামারের মাংস শতভাগ স্বাস্থ্য সম্মত। আমরা প্রাণি সম্পদ বিভাগ এ খামারিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছি। তার বিক্রি যোগ্য ২৫ টি গরু বিক্রির জন্য জন্য অনলাইন মার্কেটে যুক্ত করা হয়েছে। আসন্ন ঈদে কোরবানির জন্য জেলায় প্রায় ১৮ হাজার পশু প্রস্তুত রয়েছে। যার মধ্যে এ উপজেলায় রয়েছে সাড়ে ৩ হাজার।

আপনার মন্তব্য লিখুন