বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারির কারণে বিপাকে পড়েছেন পতাকা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। মৌসুমি বিক্রেতা কিংবা কারিগর- কারো মনেই নেই প্রশান্তি।
অন্য বছরের মতো পথেঘাটেও দেখা মিলছে না লম্বা লাঠিতে বেঁধে বিক্রি করা পতাকা বিক্রেতা।
পতাকার কারিগর, ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পতাকা বিক্রির ধুম পড়ে।
সবচেয়ে বেশি পতাকা বিক্রি হয় ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বিজয় দিবসের দিন পর্যন্ত। তবে এবছর পতাকা বিক্রি একেবারেই কম।
বিক্রেতারা জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানও কম।
ফলে এবছর পতাকা কেনার প্রতি মানুষের আগ্রহ নেই। বিজয় দিবস উপলক্ষে পতাকা বিক্রি যে বাড়বে সেই আশাও নেই বলে মনে করছেন তারা।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের উল্টোপাশের ফুটপাতে পতাকা বিক্রেতা মোজাম্মেল হোসেনের কাছে পতাকা বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পতাকা বিক্রি কেমন সেটা আর বলার মতো না। অন্য বছর এই সময়ে যেখানে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হতো, এখন সেখানে মাত্র কয়েক হাজার টাকায় নেমেছে।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের উদয়ন মার্কেটের দ্বিতীয় তলার পতাকার কারিগর রিয়াজ জানান, অন্য বছর ডিসেম্বরের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে কাজের চাপে দম ফেলার ফুরসত থাকতো না। কিন্তু এবছর পতাকা বিক্রি কম, তাই কাজের চাপও নেই। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে কয়েকজন কারিগর মিলে পতাকা বানাতাম, এবছর বিক্রি নেই বলে আমি একাই কাজ করছি। বিজয় দিবস উপলক্ষে যে পতাকাগুলো বানিয়েছি, সেগুলোই এখনও বিক্রি হয়নি।
প্রায় ২০ বছর ধরে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পতাকার ব্যবসায় সঙ্গে জড়িত কামাল। দীর্ঘদিন ধরে পতাকা বানানো এবং ব্যবসায় জড়িত থাকায় তার নাম হয়ে গেছে পতাকা কামাল। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পতাকা বিক্রির মুল সময় হচ্ছে, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ এবং ২১ ফেব্রুয়ারি। এছাড়াও সারাবছর টুকটাক পতাকা বিক্রি হয়। আমার জীবনে পতাকা বিক্রির মেয়াদে এবছরের মতো এমন ধস আর নামেনি। করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় পতাকা বিক্রি কমেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও আগ্রহ কম।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশের পতাকা বিক্রেতা ও হকার আমার কাছ থেকে পতাকা নিয়ে বিক্রি করে। এবার পতাকার হকার ও ব্যবসায়ীরা পতাকা কিনছেন না। ফলে এবছর পতাকা বিক্রি কমেছে। গতবছর এই সময় গড়ে লক্ষাধিক টাকার পতাকা বিক্রি করতাম, এবছর গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। সারাবছরের দোকান ভাড়া, কারিগরের বেতনসহ অন্য যে খরচ হয়, সেই লোকসান এবছর সামাল দিতে পারবো না।