পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালী পৌরসভার ১০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে এমনটাই খবর পাওয়া যায়।বিপুল পরিমান এই বকেয়া বিল আদায়ে পটুয়াখালী বিদ্যুৎ অফিস বারবার তাগেদাপত্র দিলেও টাকা পরিশোধে উদ্যোগ নেই পৌর কর্তৃপক্ষ।
বিদুৎ ব্যবহারে মিতব্যায়ী হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও শহরের সার্কিট হাউজ থেকে কলাতলা পানির ট্যাংকি পর্যন্ত সড়কে সারারাত রং বেরংয়ের বাতি জ্বলিয়ে আলোকসজ্জায় সুসজ্জিত করে বাড়ানো হচ্ছে পৌরসভার দেনার বোঝা। দিনদিন যেমন বাড়ছে পৌরসাভার দেনা তেমনি বিভিন্ন কোম্পানির বিলবোর্ড লাগিয়ে বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুৎ অপচয়।
সব ধরনের পৌর কর আকাশচুম্বী বাড়িয়ে পৌর পরিসেবা কমিয়ে রাতভর পৌর শহরের সরকে অতিরিক্ত আলোকসজ্জায় সজ্জিত করে এত মোটা অংকের বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া টাকা পরিশোধ না করে পৌরসভার ঋণের বোঝা বাড়ানোকে অনেকেই দেখছেন আরচোখে । এনিয়ে হচ্ছে নানা আলোচনা সমসলোচনা।
২৬ বর্গকিলোমিটারের এই পটুয়াখালী পৌরসভায় এখনো প্রায় ১০ কিলোমিটারের মত সড়ক কাচা রয়েছে। এসব সড়কে লাটিংতো দূরের কথা রাতে চলাচলও ঝুকিপূর্ণ। ৪ লেনসহ কয়েকটি সড়কে অপরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করার কাটবে আজ পৌর সভা দেনার তালিকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পৌরবাসী অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছর জ্যামিতিক হারে পৌরট্যাক্স বাড়িয়েও ১০ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। তারপর আবার রাত অবদি এই সড়কে এত আলোকাকাসজ্জার কোন মানে আছে কিনা তা আমাদের বোধগম্য নয়। অনেকে আবার এটিকে ব্যাখ্যা করেছেন আসন্ন পৌর নির্বাচনে ভোটের রাজনীতি হিসেবে।
এসব তরুন ভোটারদের আকৃষ্ট করার কুটকৌশলও বলেছেন কেউ কেউ। পৌর শহরের সড়কেই শুধু রাতভর অতিরিক্ত বাতি জ্বলছে এমনটি নয়! বিভিন্ন কোম্পানীর সাইন বোর্ড এর লাইটিংও চলছে বছর বছর কে দেয় এই সাইনবোর্ড বিদ্যুৎ বিল আর সেই টাকার হিসাব কোথায় এমন প্রশ্ন পৌরবাসীর। পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর থেকেই এই সড়কে এমন আলোকসজ্জা করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অপচয় করছেন পৌর কর্তৃপক্ষ । এরফলে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমান প্রতিদিনই বাড়ছে ।
পটুয়াখালী ওজোপডিকো অফিস সূত্রে জানা গেছে- পৌরভবন, কমিউনিটি হল, পানির পাম্প ও পৌর এলাকার রাস্তাসহ প্রায় ৩২টি হিসাবের বিপরীতে পৌরসভা এ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। গত সাড়ে চার বছরে পটুয়াখালী পৌরসভায় বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে ৯ কোটি ৯৩ লাখ ৪৫ হাজার ৯২ টাকা। বিভিন্ন মাসে পৌর কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ বিল দিলেও বেশির ভাগ মাসেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে না।
এনিয়ে প্রতি মাসে ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপডিকো) পটুয়াখালী বারবার বকেয়া বিল পরিশোধে পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলেও অজ্ঞাত কারনে প্রায় এই ১০ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করেননি তারা।
পটুয়াখালী বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দীন মোহাম্মদ মহিম জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই পৌরসভার কাছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। যা এখন প্রায় ১০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এনিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও বকেয়ার পবিমান কমছেই না বরং আরো বাড়ছে। তবে ২০২৩ সালের জুন থেকে মাসিক বিল পরিশোধ করলেও এখনো বিপুল পরিমান টাকা বকেয়া রয়েছে পৌরসভার কাছে। এনিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা উন্নয়ন সভায় পৌরসভার বকেয়া বিদ্যুৎ বিল নিয়ে সভায় উপস্থাপিত হলে জেলা প্রশাসকও উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংশিষ্ট সূত্র জানায়। তবে পৌর নির্বাচন চলমান থাকায় বিষয়টি নির্বাচনের পর দেখার ব্যপারে আলোচনা হয় সভা সূত্রে জানাগেছে।
নির্বাচনের পর পৌর কর্তৃপক্ষ বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মত কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিদ্যুৎ বিভাগ ।
পৌরসভার বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী রিয়াজ উদ্দিন মজুমদার জানান, নতুন কিছু রোড করা হয়েছে এসব সড়কে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করায় আগের চেয়ে বিদ্যুৎ খাতে ব্যয়ও বাড়ছে। পৌরসভার হিসাব সূত্র মতে ৩২/৩৫ লক্ষাধিক টাকার মতো বিদ্যুৎ বিল আসতো জুন মাসের পর থেকে । আর বিল বকেয়ার বিষয়ে মেয়র মহোদয় বলতে পারবেন বলে জানান বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ এরকাছে জানতে বারবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। সামনে পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে থাকায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।