লিয়াকত আলী,নিজস্ব প্রতিবেদক:: ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে চায় বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে নেপালের সঙ্গে একটি চুক্তি সই হয়েছে। তবে এ বিদ্যুতের ট্যারিফ বা দাম এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। এ বিদ্যুৎ আমদানি করতে হলে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করতে হবে। সেই চুক্তি এখনো হয়নি। এ পরিস্থিতিতে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি কবে নাগাদ সম্ভব হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা বলছেন, সবকিছু ঠিক থাকলেও নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আরও কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগবে।
বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে গত মে মাসে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, নেপালের ত্রিশুলি প্রকল্প থেকে ২৪ মেগাওয়াট এবং অন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৬ মেগাওয়াটসহ মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসার কথা। বাংলাদেশের ভেড়ামারায় জাতীয় গ্রিডে এই বিদ্যুৎ আসবে ভারতের বহরমপুর সঞ্চালন লাইন দিয়ে। এই বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও নেপালের পক্ষ থেকে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়।
নেপালের এ বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) বৈঠকে বসে ‘বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন ও আমদানি’ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। কমিটির প্রধান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বেঠক থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম চূড়ান্ত করে দ্রুত বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়।
বিদ্যুৎখাত উন্নয়ন ও আমদানি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়ার পর বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীরা বৈঠক করেন। বৈঠকের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদন তৈরি করে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে বলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।
সূত্রটি জানায়, ট্যারিফ নির্ধারণসহ এ বিষয়ে বেশকিছু কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। যেহেতু ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে, সেহেতু তিন দেশের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করতে হবে। এ চুক্তির আলোচনা চলছে।
রোববার অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎখাত উন্নয়ন ও আমদানি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ট্যারিফ জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের দাম দেশে কয়লাভিত্তিক উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের তুলনায় কম পড়বে।
বৈঠকে উপস্থিত একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলেন, বৈঠকে বেশকিছু বিষয় উপস্থাপন করা হয়। যেমন- নেপাল শীতকালে আমাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নিতে আগ্রহী, সে বিষয়টি জানানো হয়েছে। শীতে নেপালে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে, অপরদিকে বাংলাদেশে চাহিদা কম থাকে। এ কারণে বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহারের কারণে ভারত সরকারের সম্মতির বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎ ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশে আসবে। এজন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের সম্মতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ভারত থেকে সম্মতি দেওয়া হয়েছে বলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল গত জুনে ভারত সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হয় বলেও বৈঠকে জানানো হয়।
তিনি আরও বলেন, বৈঠকের এক পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী আমদানি করা বিদ্যুতের ট্যারিফ জানতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্য ট্যারিফ উল্লেখ করা হয়। এরপর অর্থমন্ত্রী ট্যারিফ চূড়ান্ত করে দ্রুত প্রস্তাব জমা দিতে বলেন। এখন বিদ্যুৎ বিভাগ আমদানি করা বিদ্যুতের দাম, ভারতীয় জাতীয় গ্রিড ব্যবহারের চার্জ, আমদানি শুল্কসহ সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবে।
সম্প্রতি কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি বিলম্ব হচ্ছে। কারণ দেশটি ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ও বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে শুল্ক নির্ধারণ প্রসঙ্গটি এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা সময়সাপেক্ষ। সামনে জাতীয় নির্বাচন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনতে রাজনৈতিক পরিস্থিতিও প্রভাব ফেলতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার নেপাল থেকে দ্রুত বিদ্যুৎ আমদানি করতে চাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী দ্রুত ট্যারিফ নির্ধারণ করে প্রস্তাব পাঠাতে বলেছেন। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় যত দ্রুত প্রস্তাব পাঠাবে, তত দ্রুত কার্যক্রম এগোবে। তবে সহসা এ বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।
সার্বিক বিষয়ে সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ের সিদ্ধান্তসহ আমরা এখন প্রধামন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠাবো।’