নেত্রকোনার মদন শহীদ স্মরণিকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) শ্যামল কুমার দে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানগর্ভ শিক্ষা দিতেন। পরামর্শ দিতেন সৎ মানুষ হওয়ার। নিজেকে পরিচয় দিতেন একজন আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে। কিন্তু কে জানতো জাল সনদে চাকরি নিয়ে আদর্শের বুলি আওড়াতেন তিনি।
জানা গেছে, চাকরির যোগ্যতার যে সনদ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানে সেটি জাল। সনদ জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় নিজেকে আদর্শবান প্রমাণ করে ধামাচাপা দিতে পারিবারিক সমস্যা ও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে গত ১ অক্টোবর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তবে ইস্তফাটি এখনো অনুমোদন হয়নি বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
প্রায় ১০ বছর ধরে শিক্ষক নিবন্ধনের জাল সনদ দিয়ে চাকরি করে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় এলাকার সচেতন মহল তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কাছে জোর সুপারিশ করেছেন।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, শ্যামল কুমার দে ২০১০ সালে মদন শহীদ স্মরণিকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) হিসেবে যোগদান করেন। ওই নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি অন্যান্য শিক্ষা সনদের সঙ্গে শিক্ষক নিবন্ধনের একটি সনদপত্র দাখিল করেন। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার পর তার একাডেমী সনদের রোল এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর হুবহু দিয়ে একটি জাল সনদ তৈরি করে নিয়োগ নেন। এদিকে শুধুমাত্র ২০০৫ইং সাল হতে শিক্ষক নিবন্ধনধারী মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে প্রভাষকদের সনদপত্র সঠিক কিনা তা যাছাই করে এর প্রতিবেদন শিক্ষামন্ত্রণালয়ে জমা দিতে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নির্দেশ দেন। কিন্তু তাকে বার বার বলার পরও তার সনদ জমা দেয়নি। পরে জাল সনদ আড়াল করে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পারিবারিক সমস্যা ও অসুস্থতা দেখিয়ে ১ অক্টোবর ইস্তফা দেন। এমন নাটকিয়তায় উপজেলা শিক্ষা অফিস এনটিআরসিএ সনদপত্রটি জাল ও ভুয়া বলে অভিযোগ তোলেন।
এ বিষয়ে শ্যামল কুমার দে জানান, পারিবারিক ও অসুস্থতার কারণে ইস্তফা দিয়েছি। এনটিআরসিএ সনদপত্রটি জাল কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্কাছ উদ্দিন জানান, কম্পিউটার শিক্ষক শ্যামল কুমার দে ১ অক্টোবর চাকরি থেকে ইস্তফার আবেদন দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের সভাপতি পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
এনটিআরসিএ সনদটি জাল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের অডিটের পর স্ব-স্ব শিক্ষদের কাগজপত্র বাসায় নিয়ে যাওয়ায় তার সনদ সঠিক কিনা যাচাইয়ের সুযোগ হয়নি।
মদন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, কম্পিউটার শিক্ষক শ্যামল কুমার দের এনটিআরসিএ সনদটি জমা দিতে বার বার বলার পরেও উনি তথ্য দেননি। অবশেষে চলতি বছরের ১ অক্টোবর প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে তিনি ইস্তফা দেন। এতেই বোঝা যায় উনার নিবন্ধনটি জাল ছিল।
জাল সনদে চাকরি করায় ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।