ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় একমাত্র আসামি মজনুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) মজনুকে দুপুর আড়াইটা নাগাদ আদালতে আনা হয়। আদালতের কাঠগড়ায় মজনুকে তোলা হলে সে পুলিশ ও আইনজীবীর প্রতি অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে।
আদালতে উপস্থিত পুলিশ, আইনজীবী ও সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে জানা যায়, এদিন মজনু নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে থাকে। অকথ্য ভাষায় পুলিশ ও আইনজীবীদের গালিগালাজ করতে থাকে মজনু। একপর্যায়ে পুলিশের এক সদস্যের শার্টের কলার ধরে টান দেন। তাকে ছেড়ে না দেওয়া হলে আত্মহত্যা করবে বলেও হুমকি দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
মজনু চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘আমি ধর্ষণ করি নাই, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি বাড়ি যাব। আমাকে ছেড়ে না দিলে লাফ দিয়ে মরে যাব।’
সে নয় অন্য চারজন ধর্ষণে জড়িত এমন অভিযোগ করে মজনু বলতে থাকে, পুলিশ তাদের ধরছে না আমি গরিব, আমাকে সবাই মজনু পাগল বলে, আমার গায়ে শক্তি নেই। আমাকেই পুলিশ ধরেছে।
উল্লেখ্য, এ বছর ৫ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক্ষণিকা’ নামের দ্বিতল বাসে চড়ে বান্ধবীর বাসার উদ্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন ওই ছাত্রী। সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নামেন তিনি। এরপর অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার মুখ চেপে ধরে সড়কের পেছনে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের একপর্যায়ে জ্ঞান হারান ওই ছাত্রী।
রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরলে নিজেকে একটি নির্জন জায়গায় আবিষ্কার করেন ওই ছাত্রী। পরে সেখান থেকে সে সিএনজি অটোরিকশায় করে বান্ধবীর বাসায় পৌঁছান। সেখানে অন্যান্য সহপাঠীরা এলে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করেন সহপাঠীরা।
এর পরদিন সকালে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে ওই ছাত্রীর বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি উত্তর)। ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা দেয়। শিক্ষার্থী ছাড়াও এসব বিক্ষোভে সাধারণ মানুষও অংশ নেয়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষণা দেন তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক। এরপর ৮ জানুয়ারি মজনুকে গ্রেফতার করে র্যাব। ৯ জানুয়ারি সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে মজনুকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশকে অনুমতি দেন আদালত। ১৬ জানুয়ারি ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন অভিযুক্ত।
গত ১৬ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মজনুর বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবু বক্কর। ২৬ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক বেগম মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার ভার্চুয়াল আদালতে মজনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।