প্রতিটি সৃষ্টি অনেক সুন্দর আর মানুষ হলো সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি। কিন্তু তবুও আমাদের মাঝে কতই না আক্ষেপ নিজেদের অবয়ব নিয়ে, নিজের গায়ের রঙ নিয়ে। কিন্তু আমাদের গায়ের রঙ আমরা চাইলে কিন্তু নিজেরাই করে তুলতে পারি উজ্জ্বল ও দীপ্তিময়। ত্বকের রং ফর্সা হোক কে না চায়। এর জন্য আমরা হাজার হাজার টাকা খরচ করি পার্লারের পেছনে। ব্যবহার করি কত ধরনের প্রসাধনী। কিন্তু মূল জিনিস গুলোই আমরা ঠিক মত মেনে চলতে ভুলে যাই যা ফর্সা হবার পূর্বশর্ত।
ত্বক ফর্সা রাখার কিছু উপায়
১। সূর্যের তাপ থেকে দূরে থাকা
সূর্যের তাপ থেকে সব সময় নিজের ত্বককে রক্ষা করুন। সূর্যের তাপ সরাসরি ত্বকের উপর পড়লে ত্বকের রঙ ধীরে ধীরে কালচে হতে শুরু করে। কিন্তু আমরা যতই বলি সূর্যের আলোকে এড়িয়ে চলতে, ব্যস্ততাপূর্ণ এই জীবনে আসলেই কি তা সম্ভব? না। নিত্যদিনের কাজে আমাদের বের হতেই হবে । এজন্য রোদে বের হবার আগে ভালো ব্র্যাণ্ডের সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন যা আপনার ত্বকের সুরক্ষায় নিয়োজিত থাকবে।
২। পানি
‘পানির অপর নাম জীবন’। পানি ছাড়া দেহ যেমন নিশ্চল, তেমনি ত্বকও নিশ্চল, প্রাণহীন হয়ে পড়ে। সারাদিন প্রচুর পানি পান করুন। সকালের শুরুটা করুন পানি পানের মাধ্যমে। প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় এক গ্লাস করে অন্তত পানি পান করতে থাকুন। পানি নিজের মানসিক ও শারীরিক শক্তি ঠিক রাখতেও সাহায্য করবে
৩। টমেটো
টমেটো আমাদের সবার বাসায়ই থাকে। টমেটো ভিটামিন সি তে সমৃদ্ধ। টমেটো, ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস, কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন। প্রতি সপ্তাহে এটি করতে পারেন।
৪। বাদাম ও হলুদের পেস্ট
সকালে দুধের মধ্যে ৪-৫টি বাদাম, জাফরান মিশিয়ে রাখুন। রাতে হলুদ মিশিয়ে পেস্ট করুন। রাতে এই পেস্ট মুখে ও গলায় লাগিয়ে রাখতে পারেন। সকালে উঠে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতি ২ সপ্তাহ পর পর এটি করতে পারেন।
৫। পেঁপে, কলা, কমলার পেস্ট
এক বাটিতে পেঁপে, কলা, কমলা চটকে পেস্ট করে নিন। তারপর মুখে ও গলায় লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রাখুন। এই মিশ্রণ সপ্তাহে অন্তত একবার করে দিতে পারেন।
৬। মুখ ধোয়া
সারাদিনের কর্মব্যস্ততায় আমাদের মুখে ধূলোবালি লেগে থাকে। ধূলোবালি আটকে মুখ ময়লা হয়ে যায়। তাই সময় মত মুখ ধুয়ে নিন। একটু পর পর মুখ ধুলে মুখের সব জীবাণু চলে যায়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর আমাদের শরীরের সুস্থতাও অনেকটা নির্ভর করে।
৭। দুধ
আমরা প্রায়ই বলি, ‘দুধে আলতা গায়ের রং’। হ্যাঁ। দুধে আলতা গায়ের রঙ সবার কাম্য আর দুধও হতে পারে আপনার ত্বক ফর্সা করার একটি মাধ্যম। দুধ ত্বকের মরা চামড়া দূর করে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনে। একটি বাটিতে কিছুটা দুধ নিয়ে তার মধ্যে একটি তোয়ালে ভিজিয়ে আপনার মুখে আলতো ভাবে ঘষতে থাকুন। চাইলে আপনি দুধের মধ্যে ২ টেবিল চামচ যবের গুঁড়া, ২ টেবিল চামচ বাদামি চিনি মেশাতে পারেন। এলার্জির সমস্যা থাকলে এই পেস্ট উপযোগী নয়।
৮। লেবু
একটি লেবু কেঁটে দুই ভাগ করুন আর মুখে ঘষতে থাকুন। এভাবে ১০-২০ মিনিট করার পর ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এটি করার ফলে আপনার ত্বক অনেকটা ফর্সা থাকবে।
৯। বেবী পাউডার
আগেই বলেছি, রোদে বের হবার আগে সানস্ক্রিন মাখুন। তবে সানস্ক্রিন মাখার পর মুখে ও গলায় বেবী পাউডার মেখে নিন। একটি তুলার সাহায্যে আপনি পাউডার নিতে পারেন। পাউডার এমন ভাবে নেবেন যাতে কোথাও কম বেশি না হয়।
১০। আলু
আলু ত্বক ফর্সা করার জন্য খুবই উপকারী। আলু চটকে তার মধ্যে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট করে নিন এবং তা মুখে ও গলায় লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সব ধরনের ত্বকের জন্য প্রযোজ্য।
১১। লেবুর রস ও মধু
লেবুর রস ও মধুর মিশ্রণও আপনি মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিতে পারেন। এটি ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।
১২। হলুদ
হলদে গায়ের রঙ সবার পছন্দ আর তাইতো বিয়ের কনেকে হলুদ দেয়া হয়। হলুদ দিয়ে আপনি ত্বকের রঙ অনেক লাবণ্যময় করে তুলতে পারেন। হলুদ, ময়দা ও অলিভ অয়েল একসাথে মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে ও গলায় লাগিয়ে আপনি ফিরিয়ে আনতে পারেন ত্বকের ফর্সা ভাব। কিন্তু যাদের এলার্জির সমস্যা তাদের জন্য হলুদ উপযোগী নয়। তারা শুধু ময়দা মুখে ঘষে ঘষে লাগাতে পারেন। ময়দা এক ধরনের স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে।
এই তো গেল কী কী করতে হবে। এবার চলুন জেনে নিই কী কী করা যাবেনা।
১। মুখ কখনও সাবান দিয়ে ধুবেন না।
২। ত্বকের ধরণ বুঝে ফেইস ওয়াশ কিনুন।
৩। মুখে কোনদিন ব্লিচ করবেন না। ব্লিচ মুখের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
৪। দুপুর বেলার রোদ এড়িয়ে চলুন।
৫। ধূমপানও আপনার মুখের ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
ত্বক ফর্সা রাখার এই কয়েকটি উপায় আপনি নিয়মিত মেনে চললে আপনিও পেতে পারেন অত্যন্ত সুন্দর ও উজ্জ্বল ত্বক। আশা করি এই টিপস গুলো আপনার কাজে লাগবে।