প্রতিদিনের বাংলাদেশ।। দ্বিতীয় ধাপে ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনাজপুর পৌরসভায়। এই পৌরসভায় মেয়র পদে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের একজন, বিএনপি’র একজন, জাতীয় পার্টির একজন, সিপিবি’র একজন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন প্রার্থী। তবে নেই কোনও বিদ্রোহী কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী।
দলীয় ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এই পৌরসভায় একমাত্র পুরাতন প্রার্থী বিএনপি’র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। বি.কম শিক্ষাগত যোগ্যতার সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম পরপর দুইবারের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ৪ টি মামলা চলমান রয়েছে, ২টি মামলায় অব্যাহতি পেয়েছেন এবং একটি মামলা হাইকোর্ট থেকে স্থগিত আছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাশেদ পারভেজের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা ছিল যা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। তবে অন্য ৩ প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির আহম্মেদ শফি রুবেল, কাস্তে প্রতীকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অ্যাডভোকেট মেহেরুল ইসলাম ও হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাবিবুর রহমান রানার বিরুদ্ধে নেই কোনও মামলা।
বিএনপি প্রার্থী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমবিএনপি প্রার্থী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম জেলার সবচেয়ে পুরাতন পৌরসভা দিনাজপুর স্থাপিত হয়েছিল ১৮৬৯ সালে। ২৪.৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভায় প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৮৯৮ সালে এবং চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তৎকালীন মহারাজা গিরিজানাথ রায়বাহাদুর। ৫৫তম মেয়র হিসেবে গত ২০১১ সালে নির্বাচিত হন সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। পরের মেয়াদেও নির্বাচিত হয়ে অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনে তার লক্ষ্য এখন হ্যাট্রিক করা। আর বাকি ৪টি দলের যে ৪ প্রার্থী রয়েছেন তারা এবারই প্রথম পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। অবশ্য জাতীয় পার্টির প্রার্থী এর আগে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু বিজয়ী হতে পারেননি।
জাহাঙ্গীর আলমের পেশা কৃষি ও ব্যবসায়। মেয়রের সম্মানীসহ তার বার্ষিক আয় ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯৬ টাকা। তার হাতে রয়েছে ৩ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা রয়েছে ১০ হাজার টাকা। স্ত্রীর কাছে নগদ ১০ হাজার ও ব্যাংকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ১২ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে। এই প্রার্থীর একটি একনালা শর্টগান ও স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে কৃষিজমি ১.৩৮ শতক ও অকৃষিজমি ২ একর ১৮.৫ শতক। নির্বাচনে অর্থ প্রাপ্তির উৎসে দেখিয়েছেন নিজ আয় থেকে ৩ লাখ টাকা, আত্মীয়-স্বজন ও অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দান হিসেবে আরও ২ লাখ টাকা। আর সম্ভাব্য ব্যয়ের খাতে খরচ উল্লেখ করেছেন ৫ লাখ ২ হাজার টাকা।
প্রথমবারের মত মেয়র পদে অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহরের কসবা এলাকার বাসিন্দা রাশেদ পারভেজ। মাস্টার্স ও এমবিএ পাস এই প্রার্থীর পেশা ব্যবসা, ঠিকাদার, সরবরাহকারী ও পরামর্শক। তার বার্ষিক আয় কৃষি খাত থেকে ৪৩ হাজার ২০০ টাকা। তবে ব্যবসা, ঠিকাদার, সরবরাহকারী ও পরামর্শক হিসেবে কী পরিমাণ আয় হয় তা হলফনামায় উল্লেখ করেননি তিনি। নগদ ৬ লাখ ও ব্যাংকে নিজ নামে ৫ লাখ টাকা জমা রয়েছে। রয়েছে একটি প্রাইভেট কার, কৃষি জমি ৩ একর এবং অ-কৃষি জমি ০.৪৪২৫ একর। স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ১০ লাখ টাকা ও ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে। তার অর্থ প্রাপ্তির উৎসে নিজ আয় থেকে দুই লাখ টাকা, আত্মীয়-স্বজন ও অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে ধার হিসেবে নেওয়া ২ লাখ টাকা এবং স্বেচ্ছাপ্রণোদিত এক লাখ টাকা প্রাপ্তি দেখিয়েছেন। আর সম্ভাব্য ব্যয়ের খাতে খরচ উল্লেখ করেছেন ৪ লাখ ৯৬ হাজার ২শ’ টাকা।
প্রথম বারের মেয়র পদে অংশ নিচ্ছেন জাতীয় পাটির প্রার্থী আহমেদ শফি রুবেল। পৌর শহরের সর্দার পাড়া মহল্লার বাসিন্দা এই প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বি কম পাস। মেয়র পদে প্রথমবারের মতো নির্বাচন করলেও এর আগে তিনি দিনাজপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং দিনাজপুর-৩ আসনের জাতীয় সংসদ পদে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। হলফনামা অনুযায়ী রুবেলের পেশা ঠিকাদারি। তবে বার্ষিক আয়ের পরিমাণ উল্লেখ নাই, লিখেছেন অত্র বছরে শূন্য আয়। নগদ ৬ লাখ ও ব্যাংকে নিজ নামে ৬ লাখ টাকা জমা রয়েছে। স্ত্রীর নামে রয়েছে বিভিন্ন সময় উপহার হিসাবে পাওয়া ১০ ভরি স্বর্ণালংকার। তার নির্বাচনি ব্যয়ের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি নির্বাচনি ব্যয়ের বিভিন্ন খাতে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৫শ’ টাকা খরচ করবেন। আর তার অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎসসমূহের মধ্যে নিজ আয় হতে ৫ লাখ টাকা উল্লেখ করেছেন।
এই পৌরসভায় প্রথমবারের মতো মেয়র প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অ্যাডভোকেট মেহেরুল ইসলাম। তিনি শহরের দক্ষিণ বালুবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ও জন্ম ১৯৫৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। আইন পেশায় নিয়োজিত এই প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ, এলএলবি পাস। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, তার বার্ষিক আয় কৃষি ও আইন পেশা থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। নগদ টাকা নেই তবে ব্যাংকে জমা রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কৃষি জমি যৌথ মালিকানায় ২৮ শতক। ১০ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে। নির্বাচনি সম্ভাব্য ব্যয়ে উল্লেখ করেছেন ৩ লাখ ৩ হাজার ৪শ’ টাকা। এই খরচের মধ্যে অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎসসমূহ উল্লেখ করেছেন নিজ আয় হতে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ৫০ হাজার টাকা এবং আত্মীয়-স্বজন ছাড়া অন্য ব্যক্তি থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত এক লাখ টাকা পাবেন তিনি।
অন্যান্য ৩ প্রার্থীর মতোই এবারই প্রথম পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ইসলামী আন্দোলন থেকে বাংলাদেশের হাবিবুর রহমান রানা। রামনগর এলাকার বাসিন্দা রানা এসএসসি পাস, পেশায় গুড়া ব্যবসায়ী। তার বার্ষিক আয় কৃষি থেকে ৩০ হাজার ও গুড়ার ব্যবসা থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নগদ টাকার পরিমাণ এক লাখ টাকা এবং ব্যাংকে আছে এক হাজার ১০০ টাকা। কৃষি জমির পরিমাণ ৬৬ শতক এবং স্ত্রীর নামে অকৃষি জমি ৩ শতক ও এক ভরি স্বর্ণ। নির্বাচনি ব্যয় সম্পর্কে তিনি উল্লেখ করেছেন, দেড় লাখ টাকা ব্যয় করবেন। এই খরচ নিজ ব্যবসা হতে সংস্থান করবেন তিনি।
নির্বাচনের ব্যাপারে টানা ২ বারের মেয়রের দায়িত্ব পালন করা বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি অভিজ্ঞ কিনা সেটা বিষয় না। তবে গত ১০ বছরে জনগণের সেবা করেছি, উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। সবটুকুই হয়েছে তা নয়, তবে এখনও উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান আছে। রাস্তার সম্প্রসারণ কাজ হচ্ছে, মাস্টার ড্রেন হচ্ছে। আমি নিশ্চিত যে, জনগণ আমাকে নির্বাচিত করবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মেহেরুল ইসলাম বলেন, এখনও দিনাজপুরবাসী যথাযথ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। অনেক স্থানেই অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যার কারণেই আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। জনগণ আমাকে নির্বাচিত করলে উন্নয়নসহ সামাজিক অসঙ্গতিগুলো দূর করার চেষ্টা করবো। সেক্ষেত্রে বাজেট হবে একটি বড় বিষয়।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী আহমেদ শফি রুবেল বলেন, বিজয়ী হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হটলাইন ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করবো। পৌরবাসীকে আইন-আদালত এবং পুলিশিসহ সব ধরনের হয়রানি-ভোগান্তির অবসান করবো। অঙ্গীকার করছি, আমার লাঙ্গল মার্কা নির্বাচিত হলে ড্রেন-কালভার্ট ও রাস্তাঘাটের অবস্থার সংস্কার হবে।
এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ত থাকার অজুহাতে কথা বলেননি আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাশেদ পারভেজ। আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হাবিবুর রহমান রানাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
দিনাজপুর পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজার ৮০৩ জন। যার মধ্যে ৬৭ হাজার ৭৭৭ জন নারী ও ৬৩ হাজার ২৬ জন পুরুষ। মোট ৪৯টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে এই পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে।