রাশেদুল ইসলাম রাশেদ: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর ব্যবহৃত মুঠোফোনে ‘ও জান কথা বলো না কেনো গো?’ সহ নানা ধরনের আপত্তিকর খুদে বার্তা পাঠিয়ে উত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে মাদরাসার অফিস সহকারী আল আমিন মিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী গত ১৭ দিন ধরে মাদরাসা যাওয়া বন্ধ রেখেছে বলে জানায় পরিবার।
অভিযুক্ত আল আমিন মিয়া উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর কুরুয়াবাদা ইসলামিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশ'কে অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৫৩ মিনিটে মাদরাসার অফিস সহকারী আল আমিন মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে ওই শিক্ষার্থীর মোবাইল নম্বরে ‘ও জান কথা বলো না কেনো গো?’ লেখা একটি খুদে বার্তা আসে। একইভাবে দীর্ঘদিন ধরে আল আমিন বিভিন্ন সময় ওই শিক্ষার্থীর মুঠোফোনে খুদেবার্তা ও কল দিয়ে উত্ত্যক্ত করছেন। এছাড়া ওই শিক্ষার্থীকে শিক্ষার্থীকে বিভিন্নভাবে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনও করেছেন অফিস সহকারী আল আমিন।
এদিকে, প্রায় ১৭ দিন ধরে মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ রয়েছে ওই শিক্ষার্থীর। সম্প্রতি সময়ে তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা কথা ছড়িয়ে পড়ায় মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে ওই শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবরে আবেদন করেও নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না তার পরিবারের লোকজন। বরং উল্টো তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাই বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না অভিভাবকগণ। সার্বক্ষণিক ওই শিক্ষার্থীকে পাহারা দিয়ে রাখছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, মাদরাসা আল আমিনদের নিয়ন্ত্রণে চলে। অন্য কারো কোনো পাত্তা নেই ওখানে। আল আমিনের এক বড়ভাই ওই মাদরাসার সুপার। আরেক বড় ভাই সহকারী সুপার। এছাড়াও ওই মাদ্রাসার আরও একাধিক পদে আছেন তাদের আপনজন। সে কারণে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায় না কেউ।
স্থানীয়রা আরও বলেন, আল আমিনের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ আছে। মাদরাসার একাধিক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেছে আল আমিন। ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থী পরিবারের লোকজনকে জানালে তাদেরকে জানাজানি হওয়ার আগেই বিয়ে দেয় স্বজনরা। ওই শিক্ষার্থীরা কেউ ভয়ে এসব প্রকাশ করেনি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ের ফোনে বিভিন্ন সময় ম্যাসেজ ও কল দিয়ে বিরক্ত করছে আল আমিন। গত ৮ সেপ্টেম্বর ইউএনও’র কাছে অভিযোগ দিয়েছে আমার মেয়ে। এখনও বিচার পাইনি। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে হুমকি-ধামকিসহ খুবই চাপ দিচ্ছে আমাদের। মেয়েটি মাদ্রাসায়ও যেতে পারছে না। আমরাও বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না তাদের ভয়ে।’
শিক্ষার্থীর মামা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ভাগ্নি আমাদের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। ঘটনার দিন ভাগ্নীর মোবাইল ফোনটি আমাদের কাছে ছিলো। ঠিক সেই মুহুর্তে অফিস সহকারীর মোবাইল নম্বর থেকে একটি এসএমএস আসে তার ফোনে। পরে বিষয়টি নিয়ে ভাগ্নীর সাথে কথা বলি। অফিস সহকারী তাকে উত্যক্ত করে আসছে বিষয়টি তখন স্বীকার করে সে।’
লম্পট অফিস সহকারীর শাস্তি দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ইউএনও অফিসে অভিযোগ দেয়ার পর থেকে অশান্তি আরও বেড়েছে। আপোষ-মীমাংসা করার জন্য এলাকার এবং সুন্দরগঞ্জের অনেক মাতবর চাপ ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। আমরা গরীব মানুষ। ন্যায় বিচার পাবো কি না সন্দেহ হচ্ছে।’
অভিযুক্ত অফিস সহকারী আল আমিন মিয়া বলেন, ‘আমার মোবাইল থেকে ওই শিক্ষার্থীর মুঠোফোনে এসএমএস গেছে এটা ঠিক। তবে আমি পাঠাইনি। আমার মোবাইল নিয়ে মাদ্রাসার নাইটগার্ড সেটি পাঠিয়েছে।’
অভিযুক্তের বড়ভাই ও দক্ষিণ শ্রীপুর কুরুয়াবাদা ইসলামিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. আনোয়ার হোসাইনের বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও খুদে বার্তা পাঠানো হয়। তবুও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।