গাইবান্ধা প্রতিনিধি: তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তাপাড়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'ফেসবুক' ব্যবহারকারী বাসিন্দারা তাদের প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করেছেন। এতে উত্তরবঙ্গের তিস্তারপাড়ের বিভিন্ন জেলার ফেসবুক ব্যবহারকারীরাও সাড়া দিয়ে তাদের প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করেন।
শনিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ফেসবুক প্রোফাইল পরিবর্তন করেন তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা, তরুণ লেখক ও সংগঠক মো. হাবিবুল্লাহ্ সরকার। তার দেখাদেখি তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তনে হিড়িক পড়ে যায়।
পরিবর্তন করা পিকচারে লেখা হয় 'তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই, তিস্তা বাঁচলে দেশ বাঁচবে।' পাশাপাশি ক্যাপশনে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন বৈষম্য নিরসনের যৌক্তিক দাবিও উত্থাপন করা হয়।
ফেসবুক প্রোফাইলের পরিবর্তন করা কয়েকজন জানান, আমরা তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা। আমরা রিলিপ চাই না, তিস্তা নদী খনন চাই। মঙ্গার হাত থেকে রক্ষা করতে নদী খনন করে দুই তীর রক্ষাসহ বন্যা ও ভাঙ্গনের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। তিস্তা ড্রেজিং করে কোটি মানুষের দুঃখ ঘোচানোর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তিস্তার তীরবর্তী ৫টি জেলার আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। বদলে যাবে মানুষের জীবনযাত্রা। কিন্তু একটি চক্র এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টির পায়তারা করেছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে আমাদের ফেসবুক প্রোফাইলে পিচকার পরিবর্তন করেছি।
কারমাইকেল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা আদিল আশরাফেল আদিব তার ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি পরিবর্তন করেছেন। তিনি ক্যাপশনে লিখেছেন, 'তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এখন উত্তরবঙ্গের জন্য সময়ের দাবি।'
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করেছেন স্বেচ্ছাসেবক ও সংগঠক মো. নুর আলম মিয়া (জেনএন নুর)। পিছিয়ে পড়া উত্তরবঙ্গের নানা বৈষম্য নিরসনের জন্য আক্ষেপ করে তিনি ক্যাপশনে লিখেছেন, 'পুতিন স্টাইলে বলবো নাকি, যে দেশের মানচিত্রে রংপুরের অস্তিত্ব নাই, সে দেশের মানচিত্রের কোন প্রয়োজন নাই! হা হা হা! না ভাই, আমরা সবসময়ই সরল মানুষ। শুধু আমাদের এই দরিদ্র অঞ্চলে একটু উন্নয়ন চাই। দুটো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে চাই।'
হঠাৎ করে প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করা প্রসঙ্গে তরুণ লেখক ও সংগঠক মো. হাবিবুল্লাহ্ সরকার বলেন, 'আমাদের একটায় দাবি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এটি বাস্তবায়ন হলে উত্তরবঙ্গে একটা বিরাট পরিবর্তন হবে। সেইসাথে তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবন যাত্রার যে কষ্ট সেটি থেকে তারা রেহাই পাবে। সেইসাথে বারবার বন্যা হয়ে যে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার মত ক্ষয়ক্ষতি হয় সেটি থেকে দেশ বাঁচবে। ফলে উত্তরাঞ্চল হবে একটি চাষাবাদ যোগ্য অঞ্চল। কিন্তু এটা হবে হবে করেও হচ্ছে না, আমরা ছোটকাল থেকে শুনে আসছি এটা হবে সেটা হবে। দীর্ঘকাল পেরিয়ে গেলেও উত্তর জনপদের তিস্তা অববাহিকার বাসিন্দাদের প্রাণের দাবি 'তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন' হচ্ছে না। ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করার মাধ্যমে আমরা সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই যে, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের প্রাণের দাবি 'তিস্তা মহাপরিকল্পনা' বাস্তবায়ন চাই।'
তিনি আরও বলেন, 'যতদিন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোন সুরহা হবে না, ততদিন আমরা আমাদের ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করব না।'
তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা, সাংবাদিক ও সংগঠক সুদীপ্ত শামীম বলেন, ‘তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এই নদীর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। কারণ এর সঙ্গে আরো ২২টি উপনদী রয়েছে। কিন্তু সঠিকভাবে সমীক্ষা না করার কারণে উপনদীগুলো মরে যাচ্ছে। তিস্তা তার অস্তিত্ব হারাচ্ছে প্রতিনিয়তই। অবিলম্বে তিস্তার সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক।'
তিনি আরও বলেন, ফেসবুক প্রোফাইলের পিকচার পরিবর্তন করে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানানো একটি ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ। তিস্তাপাড়ের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সবার প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করা উচিত।'