খাজা রাশেদ,লালমনিরহাট।তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে যোগ দিতে লালমনিরহাটে আসছেন জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা ও গবেষক ড. মিজানুর রহমান আজহারী। এই মাহফিলকে ঘিরে ইতোমধ্যে লালমনিরহাটজুড়ে তার ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। এই মাহফিলে কমপক্ষে ১০/১২ লাখ মানুষের সমাগম হতে পারে বলে ধারণা করছেন আয়োজকরা।
এদিকে মাহফিল ঘিরে তৎপর লালমনিরহাটের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিপুলসংখ্যক আনসার, পুলিশ,র্যাব ও সেনাবাহিনীসহ রয়েছে আয়োজকদের স্বেচ্ছাসেবকের বিশাল কর্মী বাহিনী।
আগামী শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে লালমনিরহাট পৌঁছে যোহর নামাজ শেষে বয়ান পেশ করার কথা রয়েছে ডঃ মিজানুর রহমান আজহারীর।
আয়োজকরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশের বাইরে নির্বাসিত ছিলেন বিশ্ববরেণ্য মুফাসসির ড. মিজানুর রহমান আজহারী। গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে গেলে দেশে ফিরে আসেন মিজানুর রহমান আজহারী। এরপর দেশের মানুষের আগ্রহে বিভিন্ন স্থানে মাহফিল শুরু করেন তিনি, যার ধারাবাহিকতায় আগামী শনিবার (১৮ জানুয়ারী) লালমনিরহাটে মাহফিল করবেন মিজানুর রহমান আজহারী।
ইসলামিক সোসাইটি লালমনিরহাট ঐতিহাসিক এই মাহফিলের আয়োজন করেছে। আয়োজকরা জনসমাগম বিবেচনা করে দর্শকদের জন্য চারটি মাঠ প্রস্তুত করছে। জেলার সবচেয়ে বড় সোহরাওয়ার্দী মাঠে করা হচ্ছে মূল মঞ্চ। এ ছাড়াও কালেক্টরেট মাঠ, সিপি স্কুল মাঠ এবং নারীদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে জেলা স্টেডিয়াম মাঠ। সোহরাওয়ার্দীসহ সকল মাঠে থাকবে প্রজেক্টরের ব্যবস্থা।
জানা যায়,কয়েক যুগ পর লালমনিরহাটের মাটিতে পা রাখতে যাচ্ছেন বিশ্ববরেণ্য কোনো ইসলামিক চিন্তাবিদ। এর আগে সর্বশেষ ২৮/২৯ বছর আগে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাহফিল করেন বিশ্বনন্দিত ইসলামি বক্তা ও জামায়াত নেতা প্রয়াত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এমপি। তাই দীর্ঘদিন পর এমন বিশ্ববরেণ্য স্কলারের আগমন ঘিরে নবোদ্যমে জেগে উঠেছে ইসলাম প্রিয় মানুষ। এ স্কলারের কথা শুনতে রংপুর বিভাগসহ সারা দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লি আসবেন বলে প্রস্তুত রয়েছে জেলার সকল আবাসিক হোটেল।
ঐতিহাসিক এ মাহফিল সফল করতে ইতোমধ্যে মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ করেছেন আয়োজকরা। এ ছাড়া সকল ধরনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। আয়োজক কমিটির সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বৈঠকও সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে জননিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিগত দিনের মাহফিলে ঘটে যাওয়া চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সকল ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে যাবে মাহফিল ও তার আশপাশের এলাকা।
মাহফিলের নিরাপত্তায় থাকবে বিপুল সংখ্যক আনসার ও পুলিশ সদস্য। থাকবে র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল। এ ছাড়াও সাদা পোশাকে থাকবে পুলিশ সদস্যরা। আয়োজকদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন প্রায় ৫ হাজার। সব মিলিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হবে পুরো লালমনিরহাট শহর।
ঐতিহাসিক এ তাফসিরুল মাহফিলে সভাপতিত্ব করবেন আব্দুল হাকিম ইসলামিক অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
মাহফিল আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য ইমাম রাশেদুল ইসলাম লিজু বলেন, মূল প্যান্ডেলের প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বাকি কাজও খুব তাড়াতাড়ি সমাপ্ত হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। সুতরাং বিগত মাহফিলে ঘটে যাওয়া চুরি-ছিনতাই এখানে ঘটবে না। সেদিক বিবেচনা করে আমরা কাজ করছি। মাঠের প্রবেশপথেই তল্লাশি চালানো হবে। তবে দামি স্বর্ণালংকার পরিধান না করতে নারীদের আহ্বান জানানো হয়েছে।
মাহফিলের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম বলেন, মাহফিল সফল করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে মাহফিলের মাঠগুলোতে। পুরো শহরে সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে বক্তা ও অতিথিগণের বক্তব্য শুনতে পারবে মানুষ।
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, ড. মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ,আনসার র্যাবসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। আয়োজকদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক থাকবে প্রায় ৫ হাজার। নারীদের দামি অলংকার সঙ্গে না আনতে আহ্বান জানাচ্ছি।