লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: দারিদ্র্য বিমোচন ও গ্রামাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) ক্ষুদ্রঋণ ভিত্তিক একটি এনজিও। লালমনিরহাটে ঠেঙ্গামারার ঋণের স্বাক্ষী- জিম্মাদার- ঋণগৃহীতা একই ব্যাক্তি অসহায় ফেরিওয়ালা রাশিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মামলার বিবরণ ও ফেরিওয়ালা রাশিদুল ইসলাম জানান, সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের চিনিপাড়া গ্রামের মৃত পনির উদ্দিনের ছেলে রাশিদুল ইসলাম (৪৫)। পেশায় ফেরিওয়ালা। তিনি ঠেঙ্গামারা (টিএমএসএস) এর সদস্য নন। কোন দিন ওই এনজিও থেকে ঋণও নেননি।
কিন্তু একই উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের পশ্চিম আমবাড়ী গ্রামের মৃত বন্ধে আলীর ছেলে রবিউল ইসলাম (৪৫) এর সাথে ফেরিওয়ালা রাশিদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। রবিউল ইসলাম একজন হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী। তার ব্যবসায় টাকার প্রয়োজন হলে রবিউল ইসলাম ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) লালমনিরহাট-১ শাখার ৫৬ নং দলের ১৬৬ নং সদস্য হন।
২০২৩ সালের ২১ মার্চ রবিউল ইসলাম ‘অগ্রসর প্রকল্প’ থেকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করেন এবং তার ঋণের বিপরীতে জিম্মা হিসেবে ফাঁকা চেকেরপাতায় স্বাক্ষর করা দেন। ওই ঋণের স্বাক্ষী হিসেবে ফেরিওয়ালা রাশিদুল ইসলামকে টিএমএসএসের ম্যানেজার ও রবিউল ইসলাম ভুল-ভাল বুঝিয়ে কৌশলে ফাঁকা একটি চেকেরপাতা সই করে নেন।
কিন্তু রবিউল ইসলাম ঠেঙ্গামারা (টিএমএসএস) এর ঋণ পরিশোধের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও ঋণের টাকা পরিশোধ করেননি। তাছাড়াও টিএমএসএস কর্তৃপক্ষ রবিউল ইসলামের দেখাই পান না। ফলে তার ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য স্বাক্ষী ও জিম্মাদার রাশিদুল ইসলামকে টিএমএসএসের ম্যানেজার চাপ দিতে থাকেন।
এতেও ঋণের টাকা পরিশোধ না হওয়ায় টিএমএসএস লালমনিরহাটের শাখা ব্যবস্থাপক শাহাদুল আলম বাদী হয়ে রবিউল ইসলামের ঋণের স্বাক্ষী ও জিম্মাদার ফেরিওয়ালা রাশিদুল ইসলামকে ঋণ গৃহীতা দেখিয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-১, লালমনিরহাটে এ মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-সিআর ৮৮৩/২৩। অথচ মুল ঋণ গৃহীতা রবিউল ইসলাম ঋণ নেওয়ার সময় চেক দিলেও তার বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোন মামলা দেননি টিএমএসএস কর্তৃপক্ষ।
অথচ ওই মামলায় বলা হয়, ফেরিওয়ালা রাশিদুল ইসলাম লালমনিরহাট-১ শাখা থেকে ২০২৩ সালের ২১ মার্চ ‘অগ্রসর প্রকল্প’ ১৪% সার্ভিস চার্জে হিসাবে ১ লক্ষ ৭০ হাজার ২শ ৫০ টাকা ঋণ গ্রহন করেন। ঋণ নেয়ার পর থেকে ঋণের টাকা পরিশোধ না করে নানা রকম টালবাহানা করেন। বর্তমান সেই ঋণের পাওনা ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা পাওনা থাকায় ২০২৩ সালের ২৮ মে টিএমএসএসের লালমনিরহাট-১ শাখা ব্যবস্থাপক শাহাদুল আলম আসামী রাশিদুল ইসলামকে লালমনিরহাট শাখা অফিসে ডেকে অফিসের পাওনা ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা চান। আসামী উক্ত টাকার বিপরীতে উত্তরা ব্যাংক লালমনিরহাট শাখার একটি চেক প্রদান করেন। যার সঞ্চয় হিসাব নং- ৮৪৮৩, চেক এসবিবিএফ নং- ৩৫৫৫৫৮৩। বাদী উক্ত চেকটি নিয়ে সেদিনেই টিএমএসএস, লালমনিরহাট শাখার সঞ্চয় হিসাব নং ও উত্তরা ব্যাংক, লালমনিরহাট শাখায় টিএমএসএস এসএনডি ৩৬৫৭১৪১০০০০৪১৫২ হিসাবে টাকা কালেকশনের জন্য জমা দেন। পরে উত্তরা ব্যাংক, লালমনিরহাট শাখা কর্তৃপক্ষ টাকা আদায়ের জন্য উত্তরা ব্যাংক লালমনিরহাট শাখার হিসাব নাম্বারে গেলে চেকের মধ্যে সমপরিমাণ টাকা না থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর চেকটি ডিজঅর্নার করে দেন।
এরপর বাদী ৩০ ও ২৬ অক্টোবর আসামী বরাবর লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেন। এতে লিগ্যাল নোটিশের কোন জবাব প্রদান করে নাই। ফলে ফেরিওয়ালা রাশিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত-১ এ মামলা দায়ের করেন।
ফেরিওয়ালা রাশিদুল ইসলাম বলেন, আমি লেখাপড়া জানি না। টিএমএসএসের আমি কোন সদস্য নই। ওই কারণে মামলায় আমার দল নং ও সদস্য নং নেই।টিএমএসএসের ঋণ নিয়েছেন রবিউল। রবিউলের ঋণের স্বাক্ষী হিসেবে টিএমএসএসের ম্যানেজার আমার কাছ থেকে চেকেরপাতা সই করে নিয়েছেন। আমি সরল বিশ্বাসে সই দিয়েছি। ম্যানেজার বলছিল, কোন সমস্যা নেই। সই দেন। আপনাকে টাকা দেয়া লাগবে না। আপনি শুধু স্বাক্ষী। এখন দেখছি, সেই চেকের পাতা দিয়ে আমাকে ঋণ গৃহীতা দেখিয়ে আদালতে আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
তিনি আরো বলেন, আমি সারাদিন ফেরি করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসারেই চলে না। তাহলে রবিউলের ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো। এচিন্তায় আমি ও আমার পরিবার দিশাহারা।
এ বিষয়ে টিএমএসএসের লালমনিরহাটের শাখা ব্যবস্থাপক শাহাদুল আলম বলেন, আমার লালমনিরহাট থেকে বদলী হয়েছে। তাই ওই মামলা ব্যাপারে আর কিছু বলতে পারছি না।