আশরাফুল হক, লালমনিরহাট: উত্তরের জেলা লালমনিরহাট। ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে চারিদিক। প্রতিনিয়ত বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা।
হিমেল হাওয়া আর কনকনে ঠান্ডায় জেলা জুড়ে জন-জীবন বিপর্যয়। কনকনে এই ঠান্ডায় বিপাকে পড়েছে শিশু বৃদ্ধ ও নিম্নে মায়ের মানুষজন। গত ৪ দিন থেকে ঘনকুয়াশায় ঢাকা পড়েছে পুরো জেলা। মহাসড়ক গুলোতে হেডলার জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করছে যানবাহনগুলো।
বৃহষপতিবার (১১ জানুয়ারী ) সারাদিনও সূর্যের দেখা মেলেনি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে হিমেল হাওয়া আর কনকনে ঠান্ডা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। হার কাঁপানো শীতে ঘর থেকে বের হতে পারছেনা নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকে খরকুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, আজ তাপমাত্রা ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী আরও দু'দিন এরকম অবস্হা থাকতে পারে।
এদিকে হিমেল হাওয়া আর কনকনে ঠান্ডায় জেলার পাঁচ উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষ কাজে যেতে না পাড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করছেন। তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীর তীরবর্তী চর এলাকার মানুষ এই কনকনে ঠান্ডায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদীর চর কালমাটি এলাকার শীতার্ত দিনমজুর লোকমান আলী (৫০) বলেন, হামারগুলার গরম কম্বল নাই। জাইবরা-জঙ্গল জড়ো করি আগুন ধরে দিয়া শরীল গরম কইরবার নাগছি। এতে করে জার থাকি এ্যাকনা রেহাই পাই। আগুন নিভি গ্যাইলে ফির জার নাগে। তিনি আরও বলেন হামার গুলার টাকাও নাইযে হামরা কম্বল কিনমো। ছেঁড়া-ফাটা কাপড়ের দোকানোতও দাম বেশি। হামরাগুলা কষ্টোত আছোং।
অন্যান্য শীতার্তরা বলছেন, প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে শীতার্ত দু:স্থ মানুষের ভরসা খড়কুটোর আগুন। একসাথে বসে আগুন জ্বালিয়ে শরীরে তা দিচ্ছেন ঠান্ডার দাপট থেকে রক্ষা পেতে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এলাকার দিনমজুর আলম মিয়া (৫৪) বলেন, খুব ঠান্ডা বারি গ্যাইছে। আইতের বেলাতে আরও বেশি ঠান্ডা নাগে। ঠান্ডার থেকে বাঁচার জন্য পরিবারের সবাই আগুন তাপাই। এই ঠান্ডায় এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোন কম্বল বা সাহায্য পাইনি।
হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের সালেহা বেওয়া (৪৮) বলেন, ঠান্ডার কোন কাপড় নেই, কেনার কোন সমর্থও নাই, তাই আগুন জ্বালিয়ে বসে আছি। গত তিনদিন ধরে প্রচুর শীত। এই শীতে কেউ ঘর থেকে বের হয় না।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষের জন্য গরম কাপড় বিতরণের কাজ চলছে।