রাশেদুল ইসলাম রাশেদ:: গাইবান্ধার সড়কে নেই ট্রাফিক, নেই কোনও পুলিশও। তবুও নিরাপদ আর নির্বিঘ্নে চলছে সব ধরণের যানবাহন। উত্তপ্ত রোদে, ঘামে ভিজে যতটা সম্ভব অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার এই গুরু দায়িত্ব পালন করছেন গাইবান্ধার শিক্ষার্থীরা। তারা সবাই বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটের সদস্য। এছাড়া তাদের সঙ্গে রয়েছেন গ্রাম পুলিশ, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা তাদের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ ও যানবাহন চালকরা।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সরেজমিনে দুপুরে গাইবান্ধা শহরের অতি যানজটপূর্ণ স্থান পুরাতন বাজার, বড় মসজিদ মোড়, পুরাতন জেলখানা মোড়, পার্কের মোড়, এক নং ও দুই নং ট্রাফিক মোড়, খানকাশরীফ মোড়, বাস্ট্যান্ড ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে তাদের যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় কাজ করতে দেখা গেছে।
এ সময় এসব স্থানে ছিল গাইবান্ধা সরকারি কলেজ শাখার বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি), রোভার স্কাউট, আনসার ও ফায়ার ফাইটার । প্রচণ্ড রোদে ঘামে ভেজা শরীরে শহরে ট্রাফিকের দায়িত্বপালন করা এসব শিক্ষার্থীদের পানি ও নাশতা দিয়ে সহযোগিতা করছেন সংশ্লিষ্ট মোড়ের ব্যবসায়ীরা।
এ সময় গাইবান্ধা সরকারি কলেজ বিএনসিসি’র বিএসএম আসিফ আল ফুয়াদ বলেন, আমাদের রেজিমেন্ট কমান্ডারের নির্দেশে আমরা শহরের যানজট নিরসনে সকাল ১১ টা থেকে কাজ করছি। যানজট থাকা পর্যন্ত কাজ করবো। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আমাদের নারী-পুরুষ ২০ জন সদস্য কাজ করছে। শহরের যানজট নিরসনসহ সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা।
এসময় তিনি আরও বলেন, “প্রচণ্ড রোদে আমাদের তৃষ্ণা মেটাতে পাশের ব্যবসায়ীরা পানি ও বিস্কুট দিয়ে সহযোগিতা করছে। তাদেরকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই।
ওই সময় শহরের পার্ক মোড়ের আরকে টাইলস অ্যান্ড স্যানিটারী ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী আব্দুর রশিদ মন্ডল এসব শিক্ষার্থীদের পানি ও বিস্কুট দিতে দেখা যায়। এ সময় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কোনো কিছুর বিনিময়, কারো নির্দেশ বা অনুরোধে নয়। এই তপ্ত রোদে তাদের (শিক্ষার্থীদের) তৃষ্ণার বিষয়টি খেয়াল করা থেকেই পানি ও বিস্কুট দিচ্ছি। তারা শহরের অনেক গুরুতপূর্ণ কাজ করছে।
এ সময় অটো চালক ইব্রাহীম বলেন, ‘আমি যতদিন থেকে গাড়ির চালাই কোনো দিনও এমন পরিবেশে ট্রাফিকের কাজ করতে কাউকে দেখিনি। তারা খুব আন্তরিকতার সঙ্গে ট্রাফিকের কাজ করছে। আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ বা গাড়িতে মার-ডাং করছেনা।’
জেলা রোভারের সেক্রাটারি ধীরেস চক্রবর্তী উজ্জ্বল বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক গাইবান্ধায় রোভার স্কাউটের ২৫ থেকে ৩০ জন নারী-পুরুষ সদস্য গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে যানজট নিরসনে সুন্দরভাবে কাজ করছে। এরআগে তারা শহরকে পরিচ্ছনতারও কাজ করেছে। পুলিশ না আসা পর্যন্ত তারা কাজ করবে। আমরা আসার আগে রেড-ক্রিসেন্ট সদস্যরা যানজট নিরসনের কাজ করছিল।
এসময় তিনি আরও বলেন, রোভার স্কাউট শুধু শহরে পরিচ্ছন্নতা এবং যানজট নিরসনে কাজ করছেনা। তারা নিজের পাড়া-মহল্লায় সচেতনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা নিয়েও কাজ করছে। এলাকায় কোনো অসঙ্গতি দেখলে স্থানীয়দের নিয়ে তা মোকাবিলার পাশাপাশি প্রশাসনকে জানাবে।
গাইবান্ধা ফায়ার স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার নাসিম রেজা নিলু বলেন, গাইবান্ধা শহরে নয়জনসহ পুরো জেলায় অর্ধশত ফায়ারকর্মী জেলার যানজট নিরসনে অতিরিক্ত দায়িত্বপালন করছেন। এই কাজ তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত করবে এবং পুলিশ দায়িত্বে ফেরা না পর্যন্ত করবে।
এরআগে গতকাল গাইবান্ধার বেশ কিছু শিক্ষার্থী শহরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা যানজট নিরসনে কাজ করে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (৫ আগস্ট) বাংলাদেশের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর থেকে ১১ দফা দাবি জানিয়ে কর্মবিরতি পালন করছে বাংলাদেশ পুলিশের সাধারণ সদ্যরা।