নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে চলমান ‘সবচেয়ে কঠোর বিধিনিষেধের’ দ্বিতীয় দিন শনিবার (২৪ জুলাই)। প্রথমদিন থেকেই বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল। তবে ঠিকই ‘জরুরি সেবা’সহ বিভিন্ন অজুহাতে ঢাকায় ঢুকছে মানুষ। যদিও বিষয়গুলোর ‘বৈধতা’ যাচাই শেষে যানবাহন ও মানুষকে ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। সরেজমিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর প্রবেশপথ গাবতলী-আমিনবাজার এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মিরপুর থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত অন্তত ১০টি চেকপোস্ট পরিচালনা করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক মিরপুর বিভাগ। উদ্দেশ্য বিধিবহির্ভূত যানবাহন ও মানুষের চলাচল বন্ধ ও আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া।
পথচারীদের অনেকেই কর্মজীবী। সকাল সকাল গাড়ি না থাকায় অনেকে হেঁটে রওনা হয়েছেন কর্মস্থলে। আবার দূরের অসংখ্য যাত্রী চেকপোস্ট থাকায় আমিন বাজার ব্রিজের আগে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে আসেন গাবতলী। এরপর রিকশা বা ভ্যানযোগে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা যায়।
সকালে আমিনবাজার ব্রিজে ট্রাফিক পুলিশের চেকপোস্ট পরিচালনার সময় দেখা যায়, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এমনকি রিকশা যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এসময় দেখা যায় অধিকাংশ গাড়িতেই লেখা ‘জরুরি সেবায়’ নিয়োজিত। ডাক্তার, নার্স, ওষুধ বিপণন কর্মী, ব্যাংক, ওষুধ প্রক্রিয়াজাতকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক, পুলিশসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের ব্যবহৃত ও ভাড়ায় আনা যানবাহনে স্টিকার সংযুক্ত করেছেন। স্টিকার থাকলেও অনেক গাড়ির কাগজপত্র যাচাই ও বিধিনিষেধে ঘর থেকে বের হওয়ার কাগজপত্র যাচাই করে দেখছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে।
আমিন বাজার ব্রিজে চেকপোস্টে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট সৌরভ বলেন, আজ জরুরি সেবার নামে অনেকে গাড়ি নিয়ে ঢাকায় ফিরছেন। বৈধতা সাপেক্ষে সেসব যানবাহনকে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। তবে যারা জরুরি সেবার আওতায় পড়ছেন না তাদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইনে মামলা দেওয়া হচ্ছে।
কোন কোন গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছেন জানতে চাইলে আবু সুফিয়ান নামে আরেক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, অনেকে হাসপাতালে যাচ্ছেন, রোগীর স্বজন, টিকাপ্রত্যাশী, বিদেশগামী, ব্যাংকার, ওষুধ বিপণনকারীদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
গাবতলী আউটগোয়িং সড়কেও চেকপোস্ট পরিচালনা করছে ট্রাফিক বিভাগ। সেখানেও ঢাকা থেকে বের হতে যাওয়া গাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। গাড়ির কাগজপত্র না থাকলে আটক করা হচ্ছে যানবাহন, লকডাউনের নির্দেশনা অনুযায়ী ডকুমেন্ট না মিললেও দেওয়া হচ্ছে মামলা।
সেখানে কথা হয় আরেক ট্রাফিক সার্জেন্ট বি এম সাদত হোসেনের সঙ্গে। দারুস সালাম জোন ট্রাফিকের এ সার্জেন্ট বলেন, ঢাকার ইনকামিং সড়কে চাপ বেশি। আউটগোয়িং সড়কে চাপ কম। তবুও আমরা লকডাউন বাস্তবায়নে গাড়ি ধরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। অসুস্থতা, মৃত্যুজনিত ও টিকার ব্যাপারে দ্রুত ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। পথচারীদের মাস্ক পরতে বাধ্য করা হচ্ছে। যাদের মাস্ক নেই তাদেরকে মাস্ক দেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল থেকে শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধ চলবে আগামী ৫ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত। এবারের বিধিনিষেধ গতবারের চেয়ে কঠোর হবে বলে আগেই জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন গতকাল শুক্রবারে (২৩ জুলাই) ঢাকায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে ৪০৩ জন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানায়, লকডাউন অমান্য করে অহেতুক ঘোরাফেরা করায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২০৩ জনকে ১ লাখ ২৭ হাজার ২৭০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান জানান, করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারি সবচেয়ে কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিনে সারাদেশব্যাপী র্যাবের ১৬৮টি টহল ও ১৫৮টি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। বিনা প্রয়োজনে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে র্যাবের জনসচেতনামূলক মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ কর্মসূচি চলমান ছিল।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। বিধি-নিষেধ অমান্য করায় সারাদেশে পরিচালিত ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে সর্বমোট ৯৫ জনকে ৪৮ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বিনামূল্যে এক হাজারের বেশি মাস্ক বিতরণ এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করে র্যাব।