রাশেদুল ইসলাম রাশেদ:: ছোট বউকে রুখতে লাঠি নিয়ে রীতিমতো বাড়িতে পাহাড়া বসিয়েছেন বড় বউ। আর এতে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছোট স্ত্রীকে নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন স্বামী নুরুন্নবী। আতঙ্কিত হয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন ওই অন্তঃসত্ত্বা নারী। ঘটনাটি ঘটেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ইউনিয়নের নিজামখাঁ গ্রামে।
জানা গেছে, বছর ত্রিশেক আগে বিয়ে করেছিলেন নুরুন্নবী তিস্তার ওপারের উপজেলা উলিপুরের জুম্মাবাড়ির মর্জিনাকে। বিয়ের একযুগ পরে অভাব-অনটনে পড়ায় দুই ছেলে মোকছেদুল ও রায়হানকে নিয়ে ভাগ্যেন্বষণে বেড়িয়ে যান ঢাকায়। সেখানেই কাজ করতে থাকেন নুরুন্নবী ও মর্জিনা। টাকাও জমান বেশকিছু। সেই টাকা বাবার বাড়িতে কাজে লাগান মর্জিনা।
ইতোমধ্যে নুরুন্নবী দম্পতি জন্ম দেন আরো দুই ছেলেমেয়ে। বছর পাঁচেক আগে শ্বশুর বাড়িতে জমানো টাকা এনে বাড়িতে ফেরার কথা জানান নুরুন্নবী স্ত্রী মর্জিনাকে। আর এতেই অসন্তুষ্ট হন মর্জিনা, আর ফিরতে চান না বাড়িতেও। বাধ্য হয়ে একাই বাড়িতে ফেরেন তিনি। কিছুদিন বাড়িতে থেকে রংপুরের কাউনিয়ার হারাগাছে চলে যান নুরুন্নবী। শ্রমিক হিসেবে কাজ নেন হারাগাছ জুলমটমিলে। প্রায় বছর খানেক কাজও করেন সেখানে। মাঝে দুই-তিনবার স্ত্রী মর্জিনাকে আনার জন্য নাকি ঢাকায়ও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাড়িতে ফিরতে নারাজ মর্জিনা। বাধ্য ছোট দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ফিরেন বাড়িতে। ভর্তিও করে দেন ওদের মাদ্রাসায়। আবার কাজে যান ওই জুটমিলে।
বছর পাঁচেক থেকে স্ত্রীকে কাছে না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিয়ে করেন কাউনিয়ার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নায়রা গ্রামের মৃত বাচ্চা মিয়ার মেয়ে লাকী বেগম (৩৫) কে। সুদের টাকায় ভ্যান কিনে লাকীকে নিয়ে সেখানেই বাস করতে থাকেন নুরুন্নবী। চালান বাড়িতে থাকা ছেলেমেয়ের খরচ। কিছুদিন আগে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য বাড়িতে আসেন তিনি। খবর পেয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি আসেন বড় স্ত্রী মর্জিনাও।
এদিকে খাবার না থাকায় ও সুদে কারবারি চাপ দেওয়ায় ফিরতে দেরি হওয়ায় নুরুন্নবীর বাড়ি নিজামখাঁয় চলে আসেন লাকী। যিনি এখন নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা এমনিতেই নুরুন্নবীর দ্বিতীয় বিয়ের খবরটি জানতেন না বড় বউ মর্জিনা। কিন্তু এখন দেখেন একবারে অন্তঃসত্ত্বা রাগে ফুঁসতে থাকেন মর্জিনা। লাঠি নিয়ে তেড়ে আসেন তিনি ছোট বউ লাকীকে মারতে। অবস্থা বেগতিক দেখে পাশের এক বাড়িতে আশ্রয় নেন ওই অন্তঃসত্ত্বা নারী। পরে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠা বড় বউয়ের রোষানল থেকে বাঁচাতে ওই বাড়ি থেকে কিলো দুয়েক দূরে শ্বশুর বাড়ির এলাকার এক নারীর বাড়িতে রেখে আসেন তিনি। সেখানে দিন পাঁচেক থাকার পর অসুস্থ লাকী চলে যান আবার নুরুন্নবীর পাশের বাড়িতে। সেখানেই এখন অবস্থান করছেন ওই নারী।
সোমবার সন্ধ্যায় দেখা গেছে মর্জিনাকে বাড়ির আলো নিভিয়ে রাস্তায় লাঠি নিয়ে বসে থাকতে। অন্তঃসত্ত্বা অসহায় ওই নারী বলছেন, ‘বউ তালাক দিয়েছে বলে আমাকে বিয়ে করেছে। এখন আমি কী করবো? আমার পেটে লাঠি দিয়ে মারতে আসে মর্জিনা। বলে মেরে ফেলবো তোকে।’
দ্বিতীয় বউ লাকীর কথার সত্যতা পাওয়া গেল স্থানীয়দের মুখে। তারা বলছেন, বড় বউ মর্জিনা যদি ঢাকায় না থেকে বাড়িতে ফিরতেন তাহলে তো নুরুন্নবী বিয়ে করতেন না। তারপরও আমরা গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে মিমাংসায় বসেছিলাম। কিন্তু মর্জিনার গালমন্দে সেটি আর করা সম্ভব হয়নি। লাঠি দিয়ে মারতে আসে লাকীকে। বলে উঠতে দিব না বাড়িতে।
নুরুন্নবী বলেন, ‘পাঁচ-ছয় বছর আগে আমি শ্বশুর বাড়িতে জমানো আড়াই লাখ টাকা আনতে এবং ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরতে চাই। কিন্তু মর্জিনা বাড়িতে আসে না। পরে আমি ছোট দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে চলে আসি এবং দুইবার যাই তাকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু সে আসে না। নিরুপায় হয়ে আমি বিয়ে করেছি। প্রয়োজনে আমি মর্জিনাকে ছেড়ে দেব, কিন্তু লাকীর এই অসহায় অবস্থায় ফেলে দেব না।’ এ প্রতিনিধিকে এমন কথা বলতেই অনেকের সামনেই নুরুন্নবীর কলার চেপে ধরেন মর্জিনা।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুর রশিদের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমি লোকমুখে ঘটনাটি শুনেছি। সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে আমার ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই। যদি আসে তবে বিষয়টি নিশ্চয়ই দেখবো।’