ঘরে পঙ্গু বাবা, ছোট্ট শম্পার দু’পায়ে ঘোরে সংসারের চাকা
জামালপুরে ভ্যান চালিয়ে বাবার ওষুধ কিনে দিচ্ছে চতুর্থ শ্রেণির স্কুলছাত্রী শম্পা। তার বয়স মাত্র ১০ বছর। শম্পা জামালপুর সদর উপজেলার নাকাটি গ্রামের ভ্যানচালক মো. ভাসানীর মেয়ে। সে নাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।
ভাসানীর দুই মেয়ের মধ্যে শম্পা ছোট। কয়েক বছর আগে বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর ভ্যান চালিয়ে সংসার চলত ভাসানীর। পাঁচ বছর আগে জামালপুর শহর থেকে ভ্যান চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় ভাসানীর ডান পা ভেঙে যায়। প্রথমে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পঙ্গু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করেও তার পা ঠিক হয়নি। এই চিকিৎসা করতে তার সম্পদ যা ছিল সবই শেষ। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বিছানাই তার সঙ্গী।
এদিকে ভাসানীর ওষুধের জন্য প্রতিদিন ১৫০ টাকা দরকার। বাবার ওষুধের টাকা সংগ্রহ করতে শম্পা বাবার ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সকাল থেকে ভ্যান চালিয়ে জোগাড় করেন বাবার ওষুধের টাকা।
শম্পার মা নেবুজা রাস্তার মোড়ে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবজি বিক্রি করেন। তিনি বলেন, স্বামীর চিকিৎসায় আরও ৩ লাখ টাকা দরকার। চিকিৎসকরা বলেছেন, ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করলে তার পা ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে তার ৩ লাখ টাকা খরচ হবে।
তিনি আরও জানান, তার মেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভ্যান চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে। হাত-পা প্রচণ্ড ব্যথা করে। প্রতি রাতেই তাকে হাত-পা টিপে দিতে বলেন।
শম্পা জানান, ভ্যান চালাতে খুব কষ্ট হয়। বাবার ওষুধের টাকা রোজগার হলেই বাড়িতে চলে আসি। ভ্যান চালিয়ে কোনো দিন ২০০ আবার কোনো দিন ৩০০ টাকা আয় হয়। সেই টাকা থেকে বাবার ওষুধ কিনে নিয়ে আসি।
শম্পা বলে, প্রতিদিন সকালে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হই। ২০০-৩০০ টাকা আয় হলেই বাড়ি ফিরি। সেই টাকা দিয়ে বাবার ওষুধ কিনি।
মেয়ের কষ্টের কথা মনে করে বিছানায় শুয়ে অঝোরে চোখের পানি ফেলেন বাবা ভাসানী। শম্পার ভ্যান চালানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হককে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক নাকাটি গ্রামের শম্পার বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালেয় রিপোর্ট পাঠানোর কথা জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে জামালপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন শম্পার বাড়িতে গেছেন, তিনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন