রাশেদুল ইসলাম রাশেদ:: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে কোরবানির পশুর হাট ভেঙে দেওয়ায় পুলিশ-জনতার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এতে আতঙ্ক হয়ে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে আশপাশের পাঁচ গ্রাম।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শান্তিরামের রুহুল আমিনের ছেলে রুবেল মিয়া (২৯), সতীরজানের লাল মিয়ার ছেলে মজিবুর রহমান (৫১) ও উত্তর ধর্মপুরের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মামুন অর রশিদ (২৯)।
এদিকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি থেকে বাঁচতে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে আশপাশের কয়েক গ্রাম। ঈদুল আজহা নিকটে এলেও ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না গ্রামবাসী।
জানা যায়, গত বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়নের মজুমদারহাটকে অননুমোদিত দাবি করে বন্ধ করতে যায় পুলিশ। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতিরোধের মুখে পড়ে তারা। এতে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ ৩ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় পুলিশসহ ১০ জন আহত হয়েছিলেন। পরে সুন্দরগঞ্জ ইউএনও ও গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
স্থানীয়রা জানান, অন্যান্য বছরের মতো চলতি বছরেও মজুমদারহাট এক বছরের জন্য ইজারা নেয় ইজারাদাররা।
কিন্তু সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয় ওই বাজারে পশুর হাট বসানোর অনুমতি নেই। পরে ইজারাদাররা বেশ কয়েকবার আবেদন করেও কোনো ফল না পেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। ১১ জুন হাইকোর্টের আইনজীবী মো. নূরনবী গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে কেন পশুর হাট বসানো যাবে না এই মর্মে একটি উকিল নোটিশ পাঠান। পরে আদালত পশুর হাট চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন বলে দাবি করেন তারা।
তারা আরও অভিযোগ করেন, বুধবার বিকেলে হাটে পশু বেচাকেনা শুরু হলে হঠাৎ দুই মোটরসাকেলে তিনজন পুলিশ গিয়ে বন্ধ করতে বলে।
এ সময় তারা হাটে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ছত্রভঙ্গ করতে তিন রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে হাটের মধ্যে ছোটাছুটি শুরু করলে বেশ কয়েকটি গরু-ছাগল হারিয়ে যায়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হন।
শান্তিরাম গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা রোকেয়া বেওয়া এ প্রতিবেদককে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, কোরবানি ঈদের আর কয়েকদিন বাকি। এর মধ্যেই পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান ও হয়রানির ভয়ে পাঁচগাছি শান্তিরাম, খামার ধুবনী, সতীরজান, উত্তরধর্মপুর গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। এবারের ঈদ তাদের জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে উঠেছে। ঈদের কোরবানির পশু কেনা, শিশুদের নতুন জামা-কাপড় কেনা এবং ঈদের খাদ্যসামগ্রী ক্রয় করা সম্ভব না হওয়ায় চরম কষ্টে রয়েছেন তারা। এমনই অভিযোগ করেছেন অমিরন বেগম (৫৫), মুক্তা বেগম (৩৫), হাজেরা বেওয়া (৬৫)।
তারা বলেন, এই প্রথম এমন কষ্টের ঈদ আসছে আমাদের জীবনে। পুলিশের অতি বাড়াবাড়ির কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ফলভোগ করছে নিরীহ এলাকাবাসী।
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মাহবুব আলম জানান, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সেখানে গিয়েছিল। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।