রাশেদুল ইসলাম রাশেদ:: তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ লিটারের সিলিন্ডার ৯৯৯ টাকায় ভোক্তার হাতে উঠার কথা ছিলো, সেখানে দেশের উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় এখনও বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ টাকায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে চলতি মাসের গত ৩ তারিখে। ওই দিন সন্ধ্যা থেকেই এ মূল্য কার্যকর করার কথা থাকলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি গাইবান্ধায়। এ কারণে ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা লেগেই আছে বিভিন্ন হাট বাজারের দোকানগুলোতে।
গাইবান্ধার সাত উপজেলার বিভিন্ন গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, ভোক্তাদের কাছেও বেশি দাম নিতে হচ্ছে বলে দাবি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। এতে চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন ক্রেতারা। তারা হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন প্রশাসনেরও।
গ্যাসের সিলিন্ডার কিনে বাড়ি ফিরছিলেন গৃহিণী শিরিন ইসলাম (৩৫)। বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন সুন্দরগঞ্জ পৌরসভায়। এ বিষয়ে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, 'রান্না উঠাতে গিয়ে দেখি গ্যাস শেষ। পরে হাতের কাছে এক দোকানে যাই গ্যাসের সিলিন্ডার কিনতে। ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দাম নিলেন ১ হাজার ১২০ টাকা। দাম কমিয়ে এখন ৯৯৯ টাকা করা হয়েছে বলতেই ব্যবসায়ী বলেন আগের মাল এখনও শেষ হয়নি। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।'
যমুনা গ্রুপের ১২ কেজি ওজনের ১টি গ্যাস সিলিন্ডার ১ হাজার ১৫০ টাকায় কিনে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন মো. রবিউল ইসলাম। এসময় তার সাথে কথা হলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'কি আর বলি ভাই। এর আগে একবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা চলছিলো। তখনও দাম বাড়ানো হয়নি। ভাবলাম আগেভাগে একটা সিলিন্ডার কিনে রাখি। কিন্তু ঘরে থাকা সত্বেও সেবারে আমাকে কেউ সিলিন্ডার দেননি। ঘরে মাল নেই বলে বিদায় দিয়েছেন। আর এবারে দাম কমেছে তো বলছেন আগের মাল পর্যাপ্ত আছে। সেগুলো এখনও শেষ হয়নি। এজন্যই তারা নাকি আগের দামে বিক্রি করছেন।'
ক্রেতা রায়হান মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'শুনেছি গ্যাসের দাম কমে ৯৯৯ টাকা হয়েছে, কিন্তু আমার কাছে নিলো ১ হাজার ১৫০ টাকা। তাহলে কি দাম কমানোর নামে নাটক চলছে, নাকি কম দাম সাধারণ মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়।'
ক্রেতাদের অভিযোগ, শুধু গ্যাসের ক্ষেত্রে নয়। যে কোনো পন্যের দাম বাড়ানোর সংবাদ পাওয়া মাত্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বিক্রি বন্ধ করে দেন ব্যাবসায়ীরা। পরে দাম বাড়ার দিন থেকে তা বিক্রি শুরু করেন। আর যদি দাম কমে তাহলে মজুদ তাদের শেষ হয় না। চলে মাসের পর মাস। এ বিষয়গুলো কেউ যে একজন দেখবেন সে লোকও নেই হাটবাজারে। সে কারণে ব্যাবসায়ীরা তাদের পণ্য বিক্রি করেন ইচ্ছে মতো। যেন দেখার কেউ নেই।
একাধিক ব্যাবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যমুনা, ওমেরা ও লাফস্ কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন ১ হাজার ১৫০ টাকা করে। পেট্রো ম্যাক্স বিক্রি করছেন ১ হাজার ১২০ টাকা ও ডেলটা বিক্রি করছেন ১ হাজার ১০০ টাকা করে। ডিলার পয়েন্ট থেকে বেশি দামে কেনার কারণে এ দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিলার কর্তৃক নিয়োজিত এক বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, গত বুধবার থেকে ১২ লিটারের সিলিন্ডারে ২০ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ১০০ টাকায় দোকানগুলোতে দেয়া হচ্ছে। দাম কমেছে জানি। কিন্তু আমাদের এখানে করার কিছুই নেই। যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয় সেভাবেই আমাদের কাজ করতে হয়। কারণ আমরা তাদের কর্মচারী মাত্র।
পেট্রো ম্যাক্স ও যমুনা এলপিজি সিলিন্ডারের ডিলার জীবন সাহা বলেন, 'সরকারের বেঁধে দেয়া দামে ক্রয় করতে না পারলে বিক্রি করবো কিভাবে। ১ হাজার ৮৫ টাকা দরে কোম্পানি আমার কাছে বিক্রি করেছেন। আমি কিভাবে কমে দিবো।'
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের গাইবান্ধা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, '৯৯৯ টাকা নির্ধারণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কিন্তু বাজারে কি অবস্থা তা আমার জানা নেই। শুধু গ্যাস নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। বাজারে আরও অনেক প্রডাক্ট আছে। সেগুলোও দেখতে হয় আমাদের।'
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. অলিউর রহমান বলেন, 'ক্রেতাদের কাছে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বেশি নেওয়ার কোন তথ্য পাইনি। তারপরেও নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে।'