স্টাফ রিপোর্টার:: বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা কয়েক সপ্তাহের ছাত্র ও জনতার বিক্ষোভ, রক্তক্ষয় এবং দেশজুড়ে অশান্তির পর প্রধানমন্ত্রীপদ এবং দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা, যিনি ২০০৯ সাল থেকে টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। সোমবার (৫ আগস্ট) জনগণের রোষানলে পড়ে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান। এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিরল এবং অবিশ্বাস্য অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৬ সালে, যখন আওয়ামী লীগ দীর্ঘ বিরতির পর ক্ষমতায় ফিরে আসে। তার প্রথম মেয়াদে ভারতের সঙ্গে গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তির জন্য প্রশংসিত হন তিনি। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির কাছে পরাজিত হন। ২০০৯ সালে তিনি আবার ক্ষমতায় আসেন, সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে।
শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য ছিল। ২০০৯ সাল থেকে দেশের অর্থনীতি দ্রুতবর্ধনশীল হয়ে ওঠে। মাথাপিছু আয় তিন গুণ বেড়েছে এবং গত দুই দশকে আড়াই কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে এসেছে। তার সরকারের সময়ে পোশাকশিল্পের বিকাশ এবং বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদ্মা সেতু।
শেখ হাসিনার শাসনের শেষের দিকে এসে তাকে ক্রমেই স্বৈরাচারী মনোভাবের অভিযোগের সম্মুখীন হতে হয়। বিরোধী মতের কাউকে গ্রাহ্য না করা, রাজনৈতিক গ্রেপ্তার, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আদালতের মাধ্যমে বারবার হয়রানি করা। সমালোচকদের মতে, ড. ইউনূস রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সূত্রপাতের পর, শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো এত গুরুতর প্রতিবাদের মুখোমুখি হন। ব্যাপক রক্তপাতের পর সেই আন্দোলন এক দফা বা সরাসরি সরকারের পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র–জনতার বিক্ষোভ, রক্তক্ষয় এবং দেশজুড়ে অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ এবং দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি আবাস গণভবনে জনতা ঢুকে আনন্দ-উল্লাস ও লুটপাট শুরু করে।
শেখ হাসিনার এমন পতন এবং দেশত্যাগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিরল ও অবিশ্বাস্য ঘটনা। তার শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি হলেও, স্বৈরাচারিতার অভিযোগ এবং বিতর্ক তার জনপ্রিয়তায় ছাপ ফেলেছে। এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ কিভাবে এই রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাবে এবং ভবিষ্যতে দেশটির গণতন্ত্র এবং সুশাসন কেমন হবে।
শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছাড়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নতুন মোড় নিচ্ছে। দেশের জনগণ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, কিভাবে এই পরিবর্তনকে গ্রহণ করবে এবং নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্ব কিভাবে দেশের সংকট মোকাবিলা করবে, তা সময়ই বলবে।