ডেস্ক রিপোর্ট:: ক্ষমা করা একটি মহৎ গুণ। সবার মধ্যে এই গুণটি থাকে না। আর যাদের মধ্যে এই গুণটি আছে তারাই হলেন প্রকৃত ব্যক্তি। ‘যে দুর্বল সে কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারে না। ক্ষমা হলো বলবানের লক্ষণ।’ ক্ষমা নিয়ে মহাত্মা গান্ধী এমনই উক্তি করেছেন।
আজ ক্ষমা দিবস। প্রতিবছর ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক ক্ষমা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিনটি ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত। এটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির সঙ্গে ক্ষমা দিবসের সম্পর্ক কী?
ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি ছিল ১৯৭০ এর দশকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি। নির্বাচন প্রচারাভিযান চলাকালে ১৯৭২ সালের ১৭ জুন ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দল ও প্রশাসনের পাঁচ ব্যক্তি ওয়াশিংটন ডিসির ওয়াটারগেট ভবনে বিরোধী ডেমোক্র্যাট দলের সদর দফতরে আড়িপাতার যন্ত্র বসায়।
প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের প্রশাসন কেলেঙ্কারিটি ধামা-চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন ১৯৭৪ সালের ৯ আগস্ট তোপের মুখে পড়ে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনায় নিক্সনের রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম। এ ঘটনায় বিচার ও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর মোট ৪৩ জন ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানো হয়। যাদের মধ্যে কয়েক ডজন ছিলেন নিক্সন প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা।
এ ঘটনাটি শুরু হয়েছিল পাঁচজন ব্যক্তিকে গ্রেফতারের মাধ্যমে। যারা ১৭ জুন ১৯৭২ সালে ওয়াটারগেট ভবনে বিরোধী ডেমোক্র্যাট দলের সদর দফতরে গোপনে প্রবেশ করেন। এ ঘটনার তদন্ত করে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।
১৯৭৩ সালের জুলাইয়ে সিনেট ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি তদন্ত কমিটির সাবেক সদস্যরা রাষ্ট্রপতির কর্মকর্তাদের বিরোদ্ধে প্রমাণসহ তথ্য উপস্থাপন করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্রপতি নিক্সনের অফিসে একটি টেপরেকর্ডার ছিল। যা দিয়ে তিনি অনেক কথোপকথন রেকর্ড করে রেখেছিলেন।
এই রেকর্ড থেকেই জানা যায়, রাষ্ট্রপতি নিজে এসব কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। পরবর্তীসময়ে আদালতের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী লড়াইয়ের পর, উচ্চ আদালত রাষ্ট্রপতিকে এসব রেকর্ড করা টেপ আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে নিক্সন তা মেনে নেন। ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারি গণমাধ্যমে ফাঁস করা সাংবাদিকের নাম কার্ল বার্নস্টেইন।
১৯৭৪ সালের ৯ আগস্ট রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন নিক্সন। তার উত্তরসূরি হিসেবে গ্যারাল ফোর্ড ক্ষমতায় আসীন হন। তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করে নিক্সনকে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা করেন আজকের এই দিনে।
এরপর থেকে প্রতিবছর ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক ক্ষমা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। আপনিও যদি কারও সঙ্গে ভুল বা অন্যায় করেন তাহলে আজকের দিনে ক্ষমা চাইতে পারেন। আবার অন্য কারও ভুলও ক্ষমা করে দিতে পারেন।