আশরাফুল হক, লালমনিরহাট: কুড়িগ্রামে কর্মরত এক পুলিশ সদস্য কর্তৃক লালমনিরহাটের অসহায় পরিবারের বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সদর থানা পৃথক পৃথক দু’টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন এবং ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়স্ত্রনে আনেন। আর ঘটনাটি ঘটেছে, শুক্রবার (১ জানুয়ারী) বিকাল সাড়ে ৪টায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ঢাকনাই (কুড়ারপাড়) গ্রামে। সোমবার (৪ জানুয়ারী) দুপুরে নীরহ পরিবারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাটকারী পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতারের দাবীতে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
অভিযোগ ও খোজখবর নিয়ে জানা গেছে, দীঘদিনের সরকারী খাস জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ঢাকনাই (কুড়ারপাড়) গ্রামবাসীর মাঝে চলছে নানান দ্বন্দ্ব। আর এ দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (১ জানুয়ারী) হারাটি ইউনিয়নের ঢাকনাই (কুড়ারপাড়) গ্রামে মোঃ আকবার আলীর পুত্র কুড়িগ্রামে পুলিশ লাইনে কর্মরত পুলিশ সদস্য আমিনুর (২৮) বাড়িতে এসে তার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী, লাঠি, রামদা দিয়ে ভয় দেখিয়ে প্রকাশ্য একই এলাকার আবুল হোসেন (৬২) এর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। এতে আবুল হোসেনের ১টি ঘর সর্ম্পূন রুপে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। এতে প্রায় ওই পরিবারের অর্ধলক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধিত হয়। পরে লালমনিরহাটের ফায়ার সার্ভিস এসে স্থানীয়দের সহযোগীতায় আগুন নিয়ন্ত্রেন আনে।
অগ্নিসংযোগের পরপরেই উক্ত সন্ত্রাসীর দলটি মৃত ছনেমামুদের স্ত্রী ভুল্লি (৬৬) এর নামে সরকারী বরাদ্দকৃত একটি টিনসেড ঘর বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে ভাংচুর ও ঘরে ঢুকে শুকাস ভাংচুর করে বাড়ী নির্মাণের রক্ষিত ডয়ারে রাখা ১লক্ষ টাকা লুটপাট করে নেন। এ ছাড়াও সন্ত্রাসীরা ভুল্লির ছেলে ভোলার নির্মানাধীন আধাপাকাবাড়ীর দেয়াল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। ওই সময় ইট, সিমেন্ট, রড, পানির মোটর, টিউবয়েলসহ বসতভিটার ফলজ-বনজ গাছ পালা কেটে লুটপাট করেন। এ ঘটনায় কুড়িগ্রামে পুলিশ লাইনে কর্মরত পুলিশ সদস্য আমিনুর মারাতœক ভাবে আহত হন। তার মাথা ও পায়ে মারাতœক ভাবে জখম হয়। এ ঘটনায় গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন। তবে আহত পুলিশ সদস্য আমিনুরকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়। যার রেজি নং ৩৫/৩৫, তাং ১/১/২১ইং। ওই সময় লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কয়েকজন সংবাদকর্মীর উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশ সদস্য আমিনুর কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে কথা বলে তড়িঘরি করে হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে যান। যার ভিডিও সংবাদকর্মীরা সংগ্রহ করেছেন।
এদিকে বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আবুল হোসেন বাদীয় হয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় মোঃ আকবার আলীর পুত্র পুলিশ সদস্য আমিনুর, আরিফ, কমের উদ্দিনের পুত্র আকবর আলী, মোঃ মোকতার আলীর পুত্র সেলিম, শাহাজাহান, শাহানুর, সিরাজুল, দুলালের পুত্র শিমুল, হেছার উদ্দিনের পুত্র দুলাল, মোক্তার হোসেন ও আঃ রহমানের পুত্র রফিকুলসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অপরদিকে বাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় ভুল্লি বাদীয় হয়ে ওই ব্যাক্তিরাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে পৃথক আর একটি লিখিত অভিযোগ থানায় দায়ের করেন। থানা অভিযোগ দায়ের পরেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় সন্ত্রাসী হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
ক্ষতিগ্রস্থ আবুল হোসেন ও ভুল্লি বলেন, আকবরের ছেলে আমিনুর পুলিশের চাকরি করেন। আমিনুর কুড়িগ্রামের পুলিশ লাইনে আছেন। কুড়িগ্রাম থেকে তার গ্রামের বাড়ি নিকটে হওয়ায় প্রায় বাড়িতে এসে এলাকার লোকজনকে কারণে অকারণে মারধর করেন। তার অত্যাচারে আমরা গ্রামবাসী অতিষ্ট। এবারেও আমিনুর বাড়িতে এসে একদল সন্ত্রাসী সাথে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আগুন দেন এবং বাড়ি ভাংচুর করেন। কিন্তু এবারে পুলিশ আমিনুর ফেসে যান। এলাকাবাসীর ধাওয়ায় তার মাথা ও পায়ে মারাতœক জখম হয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছি। আইনের মাধ্যমে সুষ্ঠ বিচার চাই।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহা আলম বলেন, কুড়ারপাড়ে একের পর এক ঘটনা ঘটছে। বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে উত্তেজনা পুলিশ গিয়ে নিয়ন্ত্রণে করেছে। তবে ওই ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাতারা বলেন, আমি এই মাত্র আপনার কাছে ঘটনাটি শুনলাম, আমি খোজ নিচ্ছি, ঘটনার সত্যতা পেলে ওই পুলিশ সদস্যর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
video :